ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটুক

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ইতিহাস। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি ৭১ বছর অতিক্রম করেছে। দীর্ঘ এ সময়ে ভাষা আন্দোলন, গণঅভু্যত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক সংগ্রাম-আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগ্রামে যেমন ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে তেমনইভাবে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ছাত্রলীগের কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছে। এরপরও আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃসংগঠন হিসেবে কেন্দ্রীয় নেতারা সংগঠনটিকে ঢেলে সাজিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর সংগঠনটির ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হলো। এবারও সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতাদের বলেছেন, নীতি ও আদর্শ নিয়ে চলতে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য সংগঠনটির ভাবমূর্তি উজ্জ্বলের প্রশ্নে অত্যন্ত জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, উজ্জ্বলতর অতীতের ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে নানান নেতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িয়ে আলোচিত হন। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয়, এ সময়ে টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, হত্যা, লুণ্ঠনের মতো জঘন্য অপরাধে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্তি সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি সংগঠনটি সারাদেশে 'সন্ত্রাসী বাহিনী' হিসেবেও সমালোচিত হতে থাকে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন-খারাবিও ঘটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সাংগঠনিক কর্মকান্ডেও নেমে আসে বিশৃঙ্খলা। অপরদিকে এ হেন কর্মকান্ডে বিব্রত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগঠনের প্রধান থেকে সরে দাঁড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে আশার কথা যে, ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম এ ছাত্র সংগঠনটি সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় অভ্যন্তরীণ সমন্বয় তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রচেষ্টা, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানান পদক্ষেপ নেয়ায় সংগঠনটি আবারও ঐতিহ্যের ধারায় ফিরে এসেছে। ছাত্রলীগের সম্মেলন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়েও বিষয়টি স্পষ্ট। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বেশ কিছু দিন ধরে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আল নাহিয়ান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লেখক ভট্টাচার্য্য দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের 'ভারমুক্ত' করেছেন। পাশাপাশি বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আদর্শ ও নীতি ছাড়া কোনো নেতৃত্ব তৈরি হয় না। নীতি ছাড়া কেউ কোনোদিন মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে না। জাতিকে কিছু দিতে পারে না।' প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আর ছাত্রলীগের মতো গৌরবের এ সংগঠনটির জন্য নীতি ও আদর্শের চর্চা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং সময়ের দাবি বলা যেতে পারে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ছাত্রলীগের নীতিচু্যতির যে ঘটনা দেশবাসীর সামনে উন্মোচিত হয়েছে তা অত্যন্ত পরিতাপের। যে সংগঠনের অতীত গৌরবের, সে সংগঠনের নেতাকর্মীদের আদর্শচু্যতি কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। সর্বোপরি বলতে চাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, দেশের উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন, দেশের সাধারণ মানুষের প্রিয় নেতা হয়েছিলেন নীতি ও আদর্শের কারণেই। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতার এই নীতি ও আদর্শের প্রতি আনুগত্য থেকেই বর্তমান নেতৃত্বকে সংগঠনের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হতে হবে। পাশাপাশি সংগঠনের অতীত ঐতিহ্য বিস্মৃত হওয়া চলবে না। মনে রাখা জরুরি, নীতি ও আদর্শ চর্চার মধ্যদিয়েই দেশের আগামী নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। ফলে এখন থেকেই সে প্রস্তুতি নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে ছাত্রলীগকেই বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠনটি বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুণাবলির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে পথচলার ৭২ বছর অতিক্রম করছে এটা গৌরবের। ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে আমরা অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি নতুন এই নেতৃত্ব সংগঠনের গৌরবময় যাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশাবাদের প্রতিফলন ঘটাবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।