খেলাপি ঋণ

যথাযথ উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
খেলাপি ঋণসংক্রান্ত উদ্বেগ কিছুতেই নিরসন হচ্ছে না। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো হু হু করে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। এমনকি নানা পদক্ষেপ গ্রহণ ও খেলাপিদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও আসছে না কোনো ইতিবাচক ফল। উল্টো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে খেলাপির পরিমাণ। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে বলার অপেক্ষা রাখে না, নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা মনে করি, যখন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এবং সময়ের ব্যবধানে পালস্না দিয়ে বাড়ছে, তখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। সম্প্রতিক প্রকাশিত খবরে জানা গেল, খেলাপিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় এখন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (এএমসি) গঠনে খুব আগ্রহী। এ ধারণার প্রধান উদ্যোক্তা হলো- এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা এডিবি। আর এ কাজে ঋণও দিতে প্রস্তুত। আর্থিক খাত বোদ্ধারা বলছেন, 'সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি' করা হলে এটি হবে খেলাপিদের জন্য আরও একটি ভর্তুকি! ফলে এই বিষয়টি আমলে নিতে হবে। এ ছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের ব্যাংকিং খাতকে স্বচ্ছ রাখতে আগামী অর্থবছর থেকে খেলাপি ঋণ কিনে নেবে সরকার। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী, সরকার খেলাপি ঋণ কিনতে (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজটে 'সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি' আইন প্রণয়ন করবে। জানা গেছে, এটি পাস হলে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি খেলাপি ঋণ কেনার ক্ষমতা পাবে ও পরে ব্যক্তি বা বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে সে ঋণ বিক্রি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন এই যে খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি নিয়ে কথা হচ্ছে; ওই কোম্পানির মালিক কে হবে? ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনইবা কত হবে? যে অর্থনীতিতে কোম্পানি ঋণের পরিমাণ কম-বেশি দেড় লাখ কোটি টাকা, সেই অর্থনীতির খেলাপি ঋণ আদায় বা কেনার জন্য যে কোম্পানি গঠিত হবে, তার পরিশোধিত মূলধন তো অবশ্যই বড় অঙ্কের হওয়ার কথা। সে মূলধনের জোগান দেবে কে? তাহলে কি প্রস্তাবিত অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিরও মূলধনের জোগান দেবে সরকার? সরকারি উদ্যোগে ওই ধরনের কোম্পানি গঠিত হলে ওই কোম্পানিও দেউলিয়া হবে, এটা ধরেই নেওয়া যায়। তাই এটি হবে খেলাপিদের জন্য আরও একটি ভর্তুকি এমনটিও বলেছেন। আমরা মনে করি, সার্বিকভাবে যে বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে তা আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। মনে রাখা দরকার যে উদ্যোগই নেওয়া হোক না খেলাপি ঋণসংক্রান্ত উদ্বেগ নিরসন করতে হবে। এর আগে বিভিন্ন সময়েই এমন বিষয় সামনে এসেছে, ঋণের বড় অংশই একের পর এক খেলাপি হয়ে পড়ছে, খোলাপি ঋণ আদায় করা যাচ্ছে না এবং ঋণ কেলেঙ্কারির হোতাদের অধরা থাকার বিষয়টিও সামনে এসেছে বিভিন্ন সময়ে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক চিত্র আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ব্যাংক খাতকে যে কোনো ধরনের অনিয়মের হাত থেকে রক্ষা করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। আর ঋণখেলাপি নিয়ে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তার নিরসন অপরিহার্য। সার্বিক পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করে সুষ্ঠু পরিচালনা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন জরুরি। বর্তমান বিশ্বে ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ফলে এই বিষয়টিকে সামনে রেখে এ খাতে যেন কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা বা অনিয়ম না হয় সেটি রোধ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।