পাঠক মত

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের আবহমান কালের ঐতিহ্য

প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের পরিচিতি ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদ হিসেবে। শত শত বছর ধরে এ জনপদের হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বসবাস করেছে। একে অপরের সুখ-দুঃখে একাত্ম হয়েছে। সেই নাসিরনগর অশান্ত হয়ে উঠেছিল ২০১৬ সালের অক্টোবরে। অপশক্তির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে নষ্ট হয়েছিল সম্প্রীতির পরিবেশ। সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে গিয়েছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি-মন্দির। নাসিরনগরের মানুষের জন্য কলঙ্ক বয়ে এনেছিল অবাঞ্ছিত সেই ঘটনা। সে কলঙ্কের অবসানে নাসিরনগরে গত শনিবার আয়োজন করা হয়েছিল সম্প্রীতির উৎসব। যে উৎসবে পুরোহিতের হাতে পবিত্র কোরআন শরিফ তুলে দিয়েছেন মাওলানা। আবার মাওলানার হাতে গীতা তুলে দিয়েছেন পুরোহিত। সম্মেলনে বলা হয়েছে পৃথিবীর কোনো ধর্মমত বা ধর্মগ্রন্থ ঘৃণার সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। দুনিয়ার সব ধর্ম সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। সব ধর্ম অপর ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার এবং অপর ধর্মের মানুষের প্রতি সদাচরণের শিক্ষা দেয়। এ শিক্ষার মাহাত্ম্যকে তুলে ধরার জন্যই হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা তাদের ধর্মগ্রন্থ একে অপরের হাতে তুলে দিয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন নিজেদের ধর্মের প্রতি আনুগত্যের স্বার্থেই অন্য ধর্মমতের সহাবস্থানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সংঘাত ও হিংসা এড়াতে হবে। স্মর্তব্য, ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর ফেসবুকে ইসলাম ধর্মকে অবমাননার একটি ব্যঙ্গাত্মক ছবি পোস্ট করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাসিরনগরে পরিকল্পিতভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়া হয়। সমাবেশ ডেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা চালানো হয়। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়, ফেসবুকে ব্যঙ্গাত্মক ছবি পোস্ট করার ঘটনা ছিল সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে ষড়যন্ত্রকারীরা ফায়দা লুটতে চেয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের ইতিমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। সম্প্রীতির উৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদ হিসেবে নাসিরনগরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়। আমাদের বিশ্বাস সম্প্রীতির উৎসব বিভেদকামীদের ব্যাপারে শুধু নাসিরনগর নয়্ত সারা দেশের মানুষকে সচেতন করে তুলতেও অবদান রাখবে। বাংলাদেশের পরিচিতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে। এ দেশের মানুষ স্ব-স্ব ধর্মে নিষ্ঠাবান হওয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে তারা অনুকরণীয় আদর্শ বলে ভাবে। দুনিয়ার সব ধর্মই শান্তির কথা বলে। সব ধর্ম অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আদর্শকে অনুকরণীয় বলে ভাবে। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক বলেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতার আদর্শ এ দেশে মূর্তমান। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বাক্ষর বহন করছে। ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে ভিন্নতা থাকলেও এদেশের হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সুদৃঢ় সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ। প্রাচীন, মধ্য, আধুনিক- কোনো যুগেই এই সহঅবস্থানের বন্ধন ছিঁড়ে যায়নি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম-আন্দোলনে এবং অধিকার আদায় ও সংরক্ষণের সংগ্রামে বাংলার মানুষ সবসময়ই একত্রে থেকেছে। এ সময় মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বলে কোনো আলাদা পরিচয় তাদের ছিল না। সামান্য কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বাংলাদেশ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্মাবলম্বীদের প্রায় সবারই প্রতিনিধিত্ব রয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমরা দেখি, বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরা পারস্পরিক সহাবস্থানের এক অনুকরণীয় সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। তবে সম্প্রতি রহস্যময় কিছু সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে এরূপ সম্প্রীতি বিনষ্টের জবরদস্তিমূলক তৎপরতা দেখছি আমরা। পরিশেষে বলছি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের আবহমান কালের ঐতিহ্য। এখানে সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। দেশে বিদ্যমান সম্প্রীতির এ সুমহান ঐতিহ্য আরও সুদৃঢ় করতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ঢাকা