জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মানুষের জীবনযাপনের স্বস্তি এবং বসবাসের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে আয়-ব্যয় এর সমন্বয় জরুরি। এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যদি জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পায় তবে বিষয়টি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ সমীচীন বলেই প্রতীয়মান হয়। এ ক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি থেকে শুরু করে নানা ধরনের ব্যয় বৃদ্বিজনিত কারণে মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে, বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এমন খবর নানা সময়েই পত্রপত্রিকায় উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, সদ্য বিদায়ী ২০১৯ সালে আগের বছরের তুলনায় দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে আরও বেশি, ৭১ দশমিক ১১ শতাংশ। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালে ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ এবং পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, বৃদ্ধির এই হার আগের বছরের চেয়ে বেশি। উলেস্নখ্য, মঙ্গলবার কনজু্যমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয়বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, রাজধানীর ১৫টি খুচরা বাজার ও বিভিন্ন সেবার মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী ও ১৪টি সেবার তথ্য পর্যালোচনা করে ক্যাব এই হিসাব করেছে। এই হিসাব শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রকৃত যাতায়াত ব্যয়বহির্ভূত। জানা যায়, ২০১৮ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশ এবং পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি পায় ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। আমরা বলতে চাই, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে- আর এই প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে যে, গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। এ ছাড়া অন্যান্য মসলার মধ্যে এলাচের দাম বেড়েছে। দেশি আদার দাম বেড়েছে। দেশে উৎপাদিত রসুনের দামও বেড়েছে। ২০১৯ সালে গড়ে শাকসবজির দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। তরল দুধে বেড়েছে ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এ ছাড়া দেশি থানকাপড়, বিদেশি কাপড়, খেজুরের গুড়, নারিকেল তেল, ঘরভাড়া প্রভৃতি জিনিসের দামও বেড়েছে। তবে ভোজ্যতেল, লবণ, চিনি, সাবান, পান-সুপারি ইত্যাদি পণ্যের দাম কমেছে। আমরা মনে করি, দাম বৃদ্ধির যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা আমলে নিতে হবে। জনসাধারণের সামর্থ্যের সঙ্গে নিত্যপণ্যর দাম সঙ্গতিপূর্ণ রাখতে উদ্যোগ বজায় রাখতে হবে। আরেকটি বিষয় উলেস্নখ্য যে, দেশে স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ ঘটেছে। তবে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান। সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরাও ঘটা করে চিকিৎসার জন্য প্রায়ই বিদেশ যান। এতে স্পষ্ট যে, দেশের চিকিৎসা সেবার মান কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি- এমনটিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ ছাড়া ওষুধ উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ বিশ্বের ১৪২টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে। কিন্তু দেশে ব্যাপকভাবে নকল, ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্র লক্ষণীয়- কিছু ওষুধের উচ্চমূল্য দরিদ্র রোগীদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ডাক্তারদের ফি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবার ফি বহুলাংশে অনিয়ন্ত্রিত। আমরা বলতে চাই, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে- এই বিষয়টি এড়ানোর মতো নয়। মনে রাখা জরুরি যে, নিত্যপণ্যর মূল্যবৃদ্ধিতে দিশাহারা পরিস্থতি বিভিন্ন সময়েই আলোচনায় এসেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।