বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

স্বর্ণাক্ষরে লেখা ঐতিহাসিক দিন

প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা এক ঐতিহাসিক দিন ১০ জানুয়ারি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বাধীন দেশে ফিরেছিলেন। একাত্তরে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর শহিদের রক্তস্নাত বাংলার মাটি ও মানুষ এই দিন ফিরে পেয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু নিজে তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন- 'অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা' হিসেবে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বীর বাঙালি। দেশ স্বাধীন হলেও যার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা, সেই অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে অন্ত্যরীণ। ফলে স্বাধীনতা এলেও নেতার অনুপস্থিতিতে অপূর্ণতা থেকে গিয়েছিল বিজয়ের গৌরব উদযাপনে। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে আজকের দিনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে স্বাধীন এই স্বদেশভূমি আবারও পেছনে হাঁটতে শুরু করে। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘ ২১টি বছর ধরে নানানভাবে চেষ্টা করেছে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার। কিন্তু সত্যকে অস্বীকার করে মিথ্যার রাজত্ব কতদিন চলে? আকাশে যখন সূর্য ওঠে, আঁধার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সন্ধ্যা নেমে এলে নিঃশব্দ আততায়ীর মতো আবারও আঁধার হানা দেয়। '৭৫-এর ১৫ আগস্ট আঁধার হানা দিয়েছিল বাংলার জনপদে। ২১ বছর পর আবারও মাথা উঁচু করে বাংলাদেশ অভিষিক্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শানিত সূর্যালোকে। সূর্যের মতো উদিত হয়েছে জাতির জনক তার স্ব-মহিমায়। এ সূর্য, এ আলোকিত দিন কখনো হারানোর নয়। ঝোপঝাড়ের আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকা আঁধাররূপী দানবীয় শক্তির উত্থান যাতে আর কখনো ঘটতে না পারে, সে দায়িত্ব নিতে হবে নতুন প্রজন্মকে। জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪৯তম বাষির্কীতে সে দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকার অঙ্গীকারই হোক আজকের দিনের একমাত্র শপথ। উলেস্নখ করা যেতে পারে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করা হয়। বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃতু্যর প্রহর গুনছিলেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক চাপে পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি ভোরে বঙ্গবন্ধুকে বিমানে তুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন তিনি। দিলিস্ন হয়ে ঢাকা ফেরার পথে ভারতের জনগণ যে রাজকীয় সংবর্ধনা দিয়েছিল বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে, তাতে মুগ্ধ হয়েছিল সারা বিশ্বের মানুষ। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাঙালি স্বাধীনতার পূর্ণ-আলোকে উদ্ভাসিত হয়েছিল। আজ সেই ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। আনন্দের খবর যে, বাঙালি জাতি এ বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০১২ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ পালন করছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হবে আজ থেকে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এই শতবর্ষের অনুষ্ঠান হবে। ইউনেসকো ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তও নিয়েছে। এ কারণে প্রত্যাশা থাকবে, বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানার জন্য এ প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ থাকবে সত্যের সন্ধ্যানে ব্রতী হওয়ার। শিকড়ের সন্ধান করার। শতাব্দীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিগত বছরগুলোতে তার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশকে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ধারায় প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের পুনর্জন্ম ঘটিয়েছেন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করে। আমাদের প্রিয় দেশ এখন উন্নত দেশের মহাসোপানে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আজকের এ ঐতিহাসিক দিনে নতুন প্রজন্মকে দেশ সেবায় এগিয়ে আসার অঙ্গীকার করতে হবে।