বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ

প্রতিটি নাগরিকের জন্যই অনুধাবনযোগ্য
নতুনধারা
  ১১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২০ সালের প্রথম অধিবেশনের (শীতকালীন) ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতীয় ঐকমত্য গঠনে গুরুত্বারোপ করেছেন। দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধিকে স্থায়ী রূপ দিতে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সবার ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। চলতি বছরের শুরুতে সংসদ অধিবেশনে দেয়া রাষ্ট্রপতির এ ভাষণ তাৎপর্যপূর্ণ নানা বিবেচনায়। জাতির অভিভাবকসুলভ বার্তা ও দিক-নির্দেশনা পাওয়া গেছে অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়কের কাছ থেকে। তার প্রাজ্ঞ ভাষণে নিকট অতীতের রাষ্ট্রিক অগ্রগতির বিশ্লেষণ, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও আশাবাদ- দুটোই স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। তিনি বহু বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্যই বিশেষভাবে বিবেচনাযোগ্য ও অনুধাবনযোগ্য।

সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ গণতন্ত্রের জন্য বিশেষ একটি সৌন্দর্য। সংসদীয় গণতন্ত্রে জাতীয় সংসদই রাষ্ট্রীয় সব পরিচালনার মূল চালিকাশক্তি। সংসদ নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী মূল নির্বাহী ক্ষমতার ভরশক্তি হলেও রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের চূড়াসম প্রতিষ্ঠান। ফলে রাষ্ট্রপতির প্রশংসা কিংবা সমালোচনা সরকার ও সংসদ সদস্যদের জন্য এক পরম ও শিক্ষণীয় প্রাপ্তি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বক্তব্যের সারকথা যদি একবাক্যে বলতে হয় তবে বলতে হবে, দেশের সব নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ থাকার তাগিদই তিনি দিয়েছেন। তার কারণও ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি তার দীর্ঘ ভাষণে বলেন, ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে দুর্নীতি-সন্ত্রাস-মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা মনে করি, তার এ উপলব্ধি যথাযথ। কেননা এর মধ্যদিয়েই শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি ও বৈরিতার মধ্যেও দেশে সুশাসন সুসংহতকরণ এবং গণতন্ত্রচর্চা ও উন্নয়নে কর্মসূচিতে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়পর্যন্ত জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি উলেস্নখ করেছেন। আর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই কাজটিকেই ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে অক্লান্তভাবে নির্ভীক চিত্তে তার অভিযাত্রা যে গতিশীল রেখেছেন, সেকথা বলাই বাহুল্য।

রাষ্ট্রপতি বলেছেন, এ বছর আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আমাদের দৃষ্টি ২০২১ সাল ছাড়িয়ে আরও সামনের দিকে, ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে- এটাই জাতির প্রত্যাশা। এ ছাড়া তিনি সমাজের সব স্তরে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জন করে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হবে বলে তিনি যে আশাবাদের কথা বলেছেন, এ উপলব্ধিও যথার্থ। কেননা, এটা স্বীকার করতে হবে যে, জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ নিতে পারে না। পাশাপাশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার শুধু সরকারি দল নয়- বিরোধীদলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি সরকারি দল ও বিরোধী দল নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান।

সর্বোপরি বলতে চাই, জাতীয় সংসদে দেয়া রাষ্ট্রপতির এই আহ্বান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সবার ঐকমত্য গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। সুতরাং দেশবাসীর প্রতি রাষ্ট্রপতির এই উদাত্ত আহ্বান সর্বস্তরে প্রশংসিত হবে বলেই আমরা মনে করি। পাশাপাশি আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, দেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ রাষ্ট্রপতির সদিচ্ছার বিষয়টি অন্তরের অন্তস্থলে উপলব্ধি করবেন এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের কল্যাণের জন্য যথাসাধ্য ভূমিকা রাখবেন। তাহলেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<83754 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1