বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববর্ষে প্রত্যাশা: সাংস্কৃতিক আন্দোলন

লোকমান ফরাজী ইতিহাস বিভাগ (মাস্টার্স) শিক্ষার্থী, কবি নজরুল কলেজ, ঢাকা
  ১২ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

'আমরা চলেছি যারা আচ্ছন্ন আঁধার পথ ঠেলে, যেতে হবে আরও দূর দূরতর কূলে' এই কবিতাংশকে স্স্নোগানে রূপ দিয়ে আমরা 'মুজিববর্ষ'-কে সফল করব এবং আমাদের জাতীয় জীবনে যেন তা সার্থক হয়ে ওঠে, সেই চেষ্টা করব। কেননা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছে বাঙালি জাতীয় জীবনে একজন মহান নেতা। যার জন্ম না হলে হয়তো বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করত না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা'য় কারাগারে বন্দি, সে সময়ে ০৯ নভেম্বর ১৯৬৮ পশ্চিম পাকিস্তানে মিলিটারির গুলিতে ছাত্র হত্যাকে কেন্দ্র করে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে উভয় পাকিস্তানে। তার কিছুদিন আগে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে 'প্রতিভাবানের প্রতীক্ষায়' শিরোনামে আবুল কাসেম ফজলুল হক দৈনিক আজাদ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখে পাঠান। যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে। বৌদ্ধিক সমাজ তার কাঙ্ক্ষিত প্রতিভাবানকে খুঁজতে থাকেন। সেই 'প্রতিভাবান' ব্যক্তি গণঅভু্যত্থানের মধ্যদিয়ে কারামুক্ত হন; এবং রেসকোর্স ময়দানে জনতার সংবর্ধনায় 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত হন। এমনকি ৭ মার্চের ভাষণ আজও আমাদের জাগ্রত-সংগ্রামী স্পৃহা জাগায়! বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে 'বাংলাদেশ' নামে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশে এসেই সংবিধান প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেন। শিক্ষা ও কৃষিব্যবস্থার উন্নতির মধ্যদিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। কিন্তু হায়েনারা তা সহ্য করতে পারেনি, তাই বঙ্গবন্ধুকে তারা সপরিবারে হত্যা করে। যদিও বঙ্গবন্ধুর কন্যা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে বাংলাদেশে এসে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপদানের মানসে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্পিরিট নিয়ে জাতি ও রাষ্ট্রের কল্যাণে শুভবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠলেই 'মুজিববর্ষ' সার্থক হবে। আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তুলব, এই প্রত্যয়ে তরুণ-যুবাদের এগিয়ে আসতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে। জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। 'শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড'- তাই জাতির সব নাগরিকের প্রকৃত অর্থে সনদপ্রাপ্তি নয়, প্রয়োজন বাস্তব কর্মলব্ধ জ্ঞান। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি, বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাপদ্ধতি গ্রহণ এবং শিক্ষকদের উন্নত মানস গঠন আবশ্যক। একই সঙ্গে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশও কাম্য। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির ঔদ্ধত্যের অবসান জরুরি। বর্তমানে অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনীতি হচ্ছে যে কোনো রাষ্ট্রের প্রধান চালিকাশক্তি। রাজনীতির সুস্থ প্রতিযোগিতায় ফিরে আসতে হবে। গণতন্ত্রকে নিশ্চিত করতে আমাদের নিজেদের মধ্যে সহনশীল মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। প্রতিহিংসা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে প্রযুক্তির সহায়তার কোনো বিকল্প নেই। প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। এ জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, শিশু ও পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ, কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদমুক্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত বাংলাদেশ, মানবিক মূলবোধের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশ, নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ, হিংসা-দ্বেষহীন বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, ভালোবাসা ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ- সর্বোপরি সুশৃঙ্খল প্রগতির উন্নতশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই হবে 'মুজিববর্ষ'-এর একান্ত প্রত্যয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<83922 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1