খারাপ অবস্থায় শেয়ারবাজার

যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শেয়ারবাজারের বেহাল পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ২০১০ সালে ধসের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ফিরেছে শেয়ারবাজার। এতে ঋণগ্রস্ত বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর পত্রকোষ বা পোর্টফোলিও জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়েছে। জানা যাচ্ছে- কেবল গত এক বছরের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। আমরা মনে করি, যখন এমন বিষয় আলোচনায় আসছে, ২০১০ সালে ধসের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ফিরেছে শেয়ারবাজার- তখন এ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সমীচীন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাধারণত যে কোনো বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শেয়ারবাজারের বিভিন্ন সূচক ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির তথ্য পর্যালোচনা করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের ভাবনার অবকাশ আছে যে, বর্তমানে শেয়ারবাজারের যে অবস্থা, তাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে খারাপ বার্তা পৌঁছাচ্ছে। যা দুঃখজনক। এমনকি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সংকট অনুধাবন করা এবং সেই মোতাবেক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, ২০১৮ সালে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা, যা গত বছর কমে হয় ৭ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা। এই দুই বছরেই বিদেশিরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছেন অনেক বেশি এমনটিও জানা গেছে। আমরা বলতে চাই, যখন এমন চিত্র সামনে উঠে আসছে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) যে প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের যে চেহারা, তার সঙ্গে শেয়ারবাজারের কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। তখন বিষয়টি আমলে নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিএসইসি) নানা উদ্যোগ নিয়েও বাজার নূ্যনতম স্থিতিশীল রাখতে পারেনি বলেও জানা গেছে। কারণ, সরকারের নানা আশ্বাসে ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজার ভালো হবে, হচ্ছে- এমন প্রতিশ্রম্নতি শুনে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী বাজারে বিনিয়োগ করে এখন প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন এমন বিষয়ও খবরে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়লে তা কতটা নেতিবাচক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। লক্ষণীয়, গত বছরের ১৩ জানুয়ারি ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ১৩ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। আর গত সোমবার দিন শেষে তা নেমে এসেছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৭৬ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরে শেয়ারবাজারের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকার বাজারমূল্য হারিয়েছে। আমরা বলতে চাই, বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যখন বলছেন, ২০১০ সালে ধসের পর এত দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে এমন মন্দাভাব আর দেখা যায়নি- তখন সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। কেননা প্রতিদিনই শেয়ারের দাম কমছে, আর বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারাচ্ছেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া যারা ঋণ করে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের অনেকে এরই মধ্যে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আমরা মনে করি এমন অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সঙ্গত কারণেই এ থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে এবং সংশ্লিষ্টদের তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি আমরা এ কথা বলতে চাই, ২০১৯ সালজুড়ে শেয়ারবাজারের টানা পতনের পর নতুন বছরে নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু সাম্প্রতিক দরপতনে ভালো মানের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির ওপর থেকেও পুরোপুরি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংকট নিরসনে কাজ করতে হবে। করণীয় নির্ধারণ এবং সুষ্ঠু বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে সংশ্লিষ্টদের। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি প্রত্যাশিত।