৬৭ শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার

অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোরতাই কাম্য

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির জন্য ৬৩ জন এবং অস্ত্র ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায়ে ৪ জনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ছিনতাইয়ের অভিযোগে ১৩ জনকে সাময়িক আর সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় দুজনকে ছয় মাস করে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি সাত দিনের মধ্যে এদের সবাইকে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিষদের বৈঠকে গৃহীত হয়েছে এ সিদ্ধান্ত। জানা যায়, গত বছরের ৬ আগস্ট ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৯ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ২০১২-১৩ থেকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সিআইডির তদন্ত সাপেক্ষে চার্জশিটের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এতে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় পর সাময়িক বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬৭ জন আজীবনের জন্য বহিষ্কার হলেন। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ জন শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং পাবলিক পরীক্ষা আইনে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দেয়া হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় ২৬ জুন ৭৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সারাফুজ্জামান আনসারী। যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করা গেল কি না, তা ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে আদালতকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাবির শৃঙ্খলা পরিষদের বৈঠকে ৬৭ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কারের ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাবির শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি, অস্ত্র ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, সাংবাদিকদের মারধরসহ নানান অভিযোগ বহুল আলোচিত ঘটনা। একটি দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়া গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই কলুষিত করে নিঃসন্দেহে। সঙ্গতকারণে এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কঠোর হবে এমনটিই প্রত্যাশা করে সবাই। বাস্তবতা হলো দীর্ঘদিন ধরে এসব অভিযোগ উত্থাপিত হলেও এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তবে এবারের সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রশাসন সঠিক কাজটিই করেছে। পাশাপাশি শুধু বহিষ্কারই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের কাছে এদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে সাজা কার্যকরেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বহিষ্কারের তথ্য নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের বলেছেন, 'জালিয়াতদের আমরা ছাড় দেব না। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার প্রশ্ন। কিছুদিন আগে অস্ত্র ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের চার শিক্ষার্থীকে হল প্রশাসন আজীবন বহিষ্কার করে এবং অধিকতর শাস্তির সুপারিশ করে ডিবিতে পাঠায়। তাদের কর্মকান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।' আমরা মনে করি, ঢাবি প্রশাসনের এই দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠানকে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করবে। বলাই বাহুল্য, শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অধ্যয়নে মনোনিবেশ করা। বাস্তবতা হলো, নানান কারণে কোনো কোনো শিক্ষার্থী রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি কিংবা ক্ষমতার লোভে নীতি ও আদর্শচু্যত হয়ে নানান অপকর্মে যুক্ত হয়ে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে শুধু সেই জড়িত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎই অন্ধকার হয় না, গোটা শিক্ষার্থী মহলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে এহেন অন্যায়-অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কর্তব্য হওয়া দরকার নিজেকে মুক্ত রেখে জ্ঞানের চর্চা করে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠা। সর্বোপরি বলতে চাই, যে কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে ঢাবি প্রশাসনকে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে থাকবে হবে। ঢাবির মর্যাদার প্রশ্নে কোনো অপরাধীর প্রতি অনুকম্পা দেখানোর যে কোনো সুযোগ নেই, তা প্রশাসনের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টরা ভবিষ্যতেও কঠোর অবস্থানে অনড় থাকবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।