৩১৫০ মিটার দৃশ্যমান পদ্মা সেতু

যথাসময়ে কাজ শেষ হোক

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বপ্নের পদ্মা সেতু আর স্বপ্নে নেই। এই সেতু এখন আমাদের গর্বের প্রতীক। নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়ে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের চূড়ান্তে পৌঁছে যাচ্ছে- যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, পদ্মা সেতুর ২১তম স্প্যান '৬-বি' সেতুর ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে ৩ হাজার ১৫০ মিটার (৩.১৫ কি.মি)। জানা গেছে, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সফলভাবেই স্প্যানটি বসানো সম্ভব হয়েছে। একের পর এক স্প্যান বসিয়ে এভাবেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে। ২০তম স্প্যান বসানোর ১৪ দিনের মাথায় ২১তম স্প্যানটি বসানো সম্ভব হলো। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য যে, প্রকৌশল সূত্রে জানা গেছে, সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩৬ পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৬টি পিলারের কাজ শেষ হতে পারে জুন মাসের মধ্যে। বর্তমানে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ১৩টি স্প্যান আছে। ২০টি স্প্যান পিলারের ওপর স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬টি স্প্যান চীনে প্রস্তুত হয়ে আছে এবং ২টি স্প্যান মাওয়ার পথে আছে। জানুয়ারি মাসে সেতুতে ২টি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা আছে প্রকৌশলীদের। আমরা বলতে চাই, পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রাকযোগ্যতা যাচাই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে অর্থায়ন স্থগিত করে। এরপর অনেকেরই আশঙ্কা ছিল পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন নিয়ে। কিন্তু সব আশঙ্কা দূর করে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। আর পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে ক্রমাগত। আমরা মনে করি, ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে- যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান হয়। বলা দরকার, পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান '৭-এ' ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর স্প্যান '৭-বি' সেতুর ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি। এইভাবে স্প্যান বসানোর কাজ এগিয়ে চলে। ৩১ ডিসেম্বর ১৮ ও ১৯ নম্বর পিলারে বসে স্প্যান '৩-এফ'। জানা যায়, পুরো সেতুতে ২ হাজার ৯৩১টি রোডওয়ে স্ন্যাব বসানো হবে। আর রেলওয়ে স্ন্যাব বসানো হবে ২ হাজার ৯৫৯টি। পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। স্বপ্নের এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ জানে, ফেরি পাড়ি দিয়ে পদ্মা পার হওয়া অস্বস্তিকর ও দীর্ঘ ভোগান্তির কাজ। এর মধ্যে যথেষ্ট বিড়ম্বনা ও ঝুঁকিও রয়েছে। ৭-৮ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টাও লেগে যায়। অনেক সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফেরি বন্ধ থাকে। আর এটা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে এই সেতু নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, একটা সময়ে পদ্মা সেতু নিয়ে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলেও আজ আর এই সেতু স্বপ্নে আটকে নেই, যা সামগ্রিকভাবেই ইতিবাচক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে এ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে। এখন সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে যথা সময়ে সেতুর কাজ শেষ হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।