চার লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে

এ প্রবণতা রোধ করতে হবে

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সরকার যখন শতভাগ শিক্ষার্থীর স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর তখন জানা গেল, গত দুই বছরে জেএসসি থেকে এসএসসি পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এ প্রবণতা শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনকই বটে। একটি দেশের জন্য এ পরিস্থিতি স্বস্তিকর হতে পারে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার কিছুটা কমলেও মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার কোনোভাবেই কমছে না। সরকারের বিনামূল্যের বই দেওয়া, উপবৃত্তি প্রদানসহ নানা প্রশংসনীয় কর্মসূচির পরও যখন ঝরে পড়ার হার কমছে না তখন বিষয়টিকে অতীব গুরুত্বের সঙ্গেই নিতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। খবরে বলা হয়েছে, স্কুলে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ হলেও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত এসে ঝরে পড়ার হার বেশি। সেভ দ্য চিলড্রেনসহ শিশুদের নিয়ে কাজ করা ৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থার এক সমীক্ষা মতে, মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪১ ভাগ মেয়ে এবং ৩৩ ভাগ ছেলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, স্কুল থেকে ঝরে পড়া এসব শিশু-কিশোর সবচেয়ে বেশি অধিকার বঞ্চিত হয়। এক সময় এরা সমাজে বোঝা হিসেবেও আবির্ভূত হয়। এটি উদ্বেগের। আবার বিশ্বব্যাংকের অন্য একটি প্রতিবেদনের সূত্রে শুক্রবার যায়যায়দিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১৩ লাখ শ্রমিক নতুন করে কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছে। মোট শ্রমশক্তির সাড়ে ৮৮ শতাংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। তারা মূলত জেএসসি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনটিতে আরও বলেছে, স্কুলে যাওয়ার উপযুক্ত শিক্ষার্থী মূলত দরিদ্রতার কারণেই স্কুলের বাইরে থেকে যাচ্ছে। দেশের দরিদ্রতা নিয়ে হয়তো সরকারের ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু একথাও স্বীকার করতে হবে যে, সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশ থেকে দারিদ্র্যের হার আগের তুলনায় কমেছে। ফলে এরপরও কেন শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে, তার কারণ অনুসন্ধান জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। সংশ্লিষ্টরা শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার পেছনে আর্থিক কারণ অন্যতম বলে স্বীকার করেছেন। আমরা জানি শিক্ষার পেছনে সরকার প্রতি বছর বাজেটের মোটা অংক বরাদ্দ রেখে বিনামূল্যে বই দেয়া থেকে শুরু করে উপবৃত্তি, স্কুলে মিড-ডে মিল চালু করেছে। বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ১ কোটি ৪০ লাখ বেশি শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের শতভাগ শিক্ষার্থীই উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুপুরে খাবার দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের উপবৃত্তি পরিমাণ বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। এরপরও এত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে কেন- এমন প্রশ্ন অমূলক হতে পারে না। আমরা মনে করি, প্রচলিত কৌশল যদি শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে কার্যকর না হয় তাহলে নীতিনির্ধারকদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনে আরও যুগোপযোগী কৌশল প্রণয়ন ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া। স্মর্তব্য যে, দরিদ্র পরিবারের ছেলে শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা আশা করে স্কুলে পড়ার চেয়ে তারা উপার্জন করুক। এ চিন্তা থেকে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠান না অনেক অভিভাবক। সংশ্লিষ্টরাও বিষয়টি অবগত। অন্যদিকে মেয়ে শিশুদের ঝরে পড়ার অন্যতম একটি কারণ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, স্কুলে যাওয়া-আসার পথে তাদের হয়রানির শিকার হওয়া। সর্বোপরি, শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে সে জন্য আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে সম্পদে পরিণত হওয়ার পরিবর্তে সমাজের বোঝায় পরিণত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে যেসব শিশু স্কুলে ভর্তি হয় তাদের সবাইকে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশে অনেকদিন আগে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হলেও এখনো উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষক এ পদ্ধতিতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। ফলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সঙ্গে এসব বিষয়ের সম্পর্ক আছে কিনা, তা যাচাই করে দেখা দরকার। শিক্ষাভীতি দূর করা না গেলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে সে সব সমাধান করলে ইতিবাচক ফল মিলবে, এটা আশা করা যায়।