কন্ডাক্টরের ধাক্কায় যাত্রীর পা পিষ্ট

সড়কের এই নৈরাজ্য রুখবে কে?

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার চিত্র এককথায় ভয়াবহ। প্রায় প্রতিনিয়তই সড়কে করুণ পরিণতির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বেপরোয়া বাস দুর্ঘটনায় কেউ হাত কিংবা পা হারাচ্ছে আবার কারও কোমর ভাঙছে। পক্ষান্তরে প্রাণহানির কথা বলাই বাহুল্য। এবার জানা গেল, বাসের কন্ডাক্টরের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে বাসের চাকায় এক যাত্রীর দুই পা পিষ্ট হওয়ার খবর। শুক্রবার রাতে রাজধানীর কারওয়ানবাজার এলাকায় বিএসিসি ভবনের সামনে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়। গণমাধ্যমের খবরে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে উলেস্নখ করা হয়েছে, ৮ নম্বর পরিবহণের একটি চলন্ত বাসের দরজায় কথা কাটাকাটি হচ্ছিল যাত্রী আর কন্ডাক্টরের মধ্যে। হঠাৎ দুজনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই কন্ডাক্টর যাত্রী শরিফুল ইসলামকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেন। এ সময় শরিফুল নিজের দেহ সরিয়ে নিতে পারলেও দুই পা বাসের চাকায় পিষ্ট হয়। এ ঘটনায় বাসের যাত্রীরা জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং বাসটি জব্দ করে। চালক পারভেজ ও অভিযুক্ত কন্ডাক্টর আরিফকে আটক করা হয়। আর গুরুতর আহত শরিফুলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। লক্ষণীয় যে, দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানীসহ সারা দেশে গণপরিবহণ সংশ্লিষ্টদের দৌরাত্ম্য চলছে। সরকার আইন প্রয়োগ করেও এদের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব দূরীভূত করতে পারছে না। যাত্রীরা প্রায়ই সংশ্লিষ্টদের স্বেচ্ছাচারিতার বলি হলেও চালকদের সতর্ক হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর আগে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে দুই বাসের চাপায় হাত হারিয়ে ১৩ দিনের মাথায় প্রাণ হারাতে হয় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনকে। এরপর গোপালগঞ্জে হাত হারান আরেক বাসযাত্রী খালিদ হাসান হৃদয়। এ ছাড়া রাজধানীর পলাশীর মোড়ে উল্টো পথে চলতে বাধা দেওয়ায় ট্রাফিক ইন্সপেক্টর দেলোয়ারের পায়ের ওপর বাসের চাকা তুলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে স্পষ্ট হতে পারে, যত দিন যাচ্ছে ততই বাস চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। অথচ জননিরাপত্তার স্বার্থে এই নৈরাজ্য চলতে দেয়া উচিত নয়। বাসের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, তাদের সহিষ্ণুতার অভাবে আর কত মানুষের জীবনে অকালে অন্ধকার নেমে আসবে- সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো বিবেচনায় এমন প্রশ্ন অযৌক্তিক হতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বারবার উলেস্নখ করেছেন, দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পরিবহণ খাতে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা। বেতনভুক্ত চালক দিয়ে লোকাল বাস চালালে মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আর এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নগরীর অধিকাংশ পরিবহণ মালিক তাদের বাস-মিনিবাসচালককে চুক্তিতে চালাতে দিচ্ছেন। আর চুক্তির কারণেই চালকরা বেপরোয়া। কারণ একই রুটের যে বাস আগে শেষ গন্তব্যে পৌঁছাবে সে-ই ফিরতি ট্রিপের সিরিয়াল পাবে আগে। এ কারণে যেমন একই রুটের বাসের মধ্যে ভয়াবহ রেষারেষি প্রকট তেমনিভাবে, ভাড়া নিয়েও যাত্রীদের সঙ্গে চলে বচসা। কখনো হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। যার পরিণতিতে ঘটে যায় একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। গণপরিবহণ সংশ্লিষ্টদের অসহিষ্ণু মনোবৃত্তির আরেকটি দৃষ্টান্তই যে মর্মান্তিকভাবে শরিফুল ইসলামের দুই পা পিষ্ট হয়ে যাওয়া, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা মনে করি, যাত্রীস্বার্থ বিবেচনায় সড়ক-মহাসড়কের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা যেমন নিরসন হওয়া আবশ্যক। অন্যদিকে বাসের চালক-কন্ডাক্টর এবং যাত্রীদের মধ্যেও সহিষ্ণু মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। সবাই সচেতন না হলে এ প্রবণতা রোধ হবে না বলেই অনুমান করা যায়। একদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হয়, অন্যদিকে অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি চালানোর ভার দিয়ে অসংখ্য মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। সরকার তথা প্রশাসনকে এ বিষয়টির দিকেও নজর দিতে হবে। আমরা বিবেচনা করি, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়। এ জন্য দরকার ইতিবাচক চিন্তা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। এ জন্য পরিবহণ মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে। সহিষ্ণু আচরণ করতে হবে যাত্রী এবং পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের। পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। শুক্রবারের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির সাজা নিশ্চিত হোক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।