শিশু গৃহকর্মীকে খুন্তির ছঁ্যাকা এর শেষ কোথায়?

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আবারও ঘটলো গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা। একের পর এক যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে তখন তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। শিশু গৃহকর্মীদের গায়ে খুন্তির ছঁ্যাকা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে তা কতটা ঘৃণ্য ও বর্বরতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কুতুবখালীর একটি বাসায় শিশু গৃহকর্মীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। মুরগি মেরে ফেলছে এমন কারণে হাত বেঁধে মুখে টেপ দিয়ে তারপর খুন্তি গরম করে শরীরে ছঁ্যাকা দিয়েছে। যখন রক্ত বের হয়েছে তখন অন্যদের বলেছে ফোঁড়া হয়েছে। এভাবেই নিজের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছে শিশু গৃহকর্মী মালা। তথ্য মতে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এখন তার চিকিৎসা চলছে। আরো বিস্ময়কর হলো, বার্ন ইউনিটের এক নার্সের বিরুদ্ধেই এ নির্যাতনের অভিযোগ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নির্যাতনে শিশুটির শরীরের ৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। জানা গেছে, ওই বাসার গৃহকর্ত্রী দিলারা ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নার্স। আমরা বলতে চাই, একজন রোগীর সুস্থ হয়ে উঠতে নার্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেবা যার অন্যতম দায়িত্ব, অথচ একজন নার্স যখন নিজ বাসায় গৃহকর্মীর ওপর এমন ঘৃণ্য ও বর্বর নির্যাতন চালায়- তখন পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে তা আমলে নেওয়া আবশ্যক বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বলেছেন, শিশুটির খালা সুমা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করার পর গৃহকর্তা রাজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর পলাতক থাকায় দিলারাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। আমরা বলতে চাই, এই মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত হোক এবং যত দ্রম্নত সম্ভব আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইন গত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত হোক। একইসঙ্গে বলতে চাই, সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে যে, একের পর এক কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে- কেন মানুষ এত হিংস্র ও ঘৃণ্য কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এর কারণ অনুসন্ধান সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণও জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর আগে এমন খবরও সামনে এসেছে যে, দেশে গৃহশ্রমিকের মধ্যে ৮০ শতাংশ নারী ও শিশুশ্রমিক। এই নারী ও শিশুরাই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বেশি। সাধারণত মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোয় শিশু বা কিশোর বয়সী গৃহকর্মী রাখা হয়। অভাবের তাড়নায় গ্রাম থেকে শহরে আসে এরা। নিয়োগকর্তা, কর্ত্রী, নিয়োগকর্তার পরিবারের কোনো সদস্য দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়। এ ছাড়া দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি ধর্ষণসহ বিভিন্ন রকম যৌন হয়রানির শিকার হয় এমন বিষয়ও উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, এই ধরনের ঘটনাগুলোকে আমলে নিতে হবে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এমন বর্বর ঘটনার পনুরাবৃত্তি রোধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, অনেক সময় নির্যাতনের ঘটনায় অর্থ ও চাপের মুখে সমঝোতা করা হয়। এ ছাড়া গৃহকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা দরিদ্র তাই মামলা মোকদ্দমায় যেতে চান না বা যেতে সাহস পান না। এ ছাড়া প্রভাবশালীরা অনেক নির্যাতনের ঘটনাই ধামাচাপা দিয়ে ফেলেন। এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। কিন্তু আমরা মনে করি যে, কোনোভাবেই গৃহকর্মীদের নির্যাতন করা কিংবা তাদের প্রতি অবিচার সমর্থন যোগ্য হতে পারে না। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত করাসহ গৃহকর্মীর সার্বিক নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।