সূচকের সর্বোচ্চ উত্থান

পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতাই কাম্য

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বেশ কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিক পতনের পর ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের ব্যাপক উত্থানের মধ্যদিয়ে লেনদেন শেষ হয় গত রোববার। ডিএসইএক্স সূচক চালুর পর সূচক দাঁড়িয়েছে ৭-এ। এটিই সর্বোচ্চ উত্থান। পুঁজিবাজার সবসময় একটি গতিশীল অবস্থানে থাকবে সেই প্রত্যাশা করেন বিনিয়োগকারীরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, সূচকের ব্যাপক উত্থান কিংবা অস্বাভাবিক পতন কোনোটাই পুঁজিবাজারের জন্য সুখকর নয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানান নির্দেশনার পর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সূচকে এই উত্থানকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্য অনুযায়ী, গত রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বা ২৩২ পয়েন্ট বেড়ে হয় ৪ হাজার ৩৮২ পয়েন্ট। সাত বছর আগে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে নতুন এই সূচক চালু হওয়ার পর এত বড় উত্থান দেখা যায়নি। এর আগে ডিএসইর পুরনো সূচক ডিজিইন থাকার সময় ২০১২ সালে ৭ ফেব্রম্নয়ারিতে সূচক বেড়েছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ; সেদিন ৩২৯ পয়েন্ট বেড়ে ডিজিইএন হয়েছিল ৩ হাজার ৯৪৫ পয়েন্ট। রোববার লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দরও বেড়েছে। টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ১৪ হাজার টাকা। সে হিসেবে রোববার ডিএসইতে লেনদেন বাড়ে ১৪৩ কোটি ৮৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক সিএসইএক্স ৪১৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করে ৮ হাজার ৪৮ পয়েন্টে। দিন শেষে লেনদেন হয় ৪৩ কোটি ৬৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকমাস ধরে দেশের পুঁজিবাজারে কেবলই দরপতনের ঘটনা ঘটছে। পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক এই দরপতনে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কায় পড়েন। বলাই বাহুল্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অন্যসব সূচকে দেশ যখন ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে, তখন শেয়ারবাজারের দিকে তাকালে রীতিমতো করুণা হয়। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে ২০১০ সালে বড় ধসের পর ১০ বছরের ব্যবধানে নতুন করে ধস নামে শেয়ারবাজারে। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি সূচকটির যাত্রা শুরু হয়েছিল ৪ হাজার ৫৬ পয়েন্টে। এই পয়েন্ট নেমে আসে ৪ হাজার ৩৬ পয়েন্টের কাছাকাছি। এতে আতঙ্ক ও হতাশায় নিমজ্জিত হন প্রায় সব শ্রেণির বিনিয়োগকারী। লক্ষ্য করা যায়, এতে নিঃস্ব তথা পথে বসার আগেই বাজার থেকে অনেক বিনিয়োগকারী বেরিয়ে যেতে চান। যে কারণে বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ তৈরি হয়। অন্যদিকে ক্রেতারও সংকট দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুনর্গঠনের দাবি ওঠে। যদিও সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয় পুঁজিবাজারের সমস্যা-সংকট সম্পর্কে সচেতন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ নানান পদক্ষেপও নেয়া হয়। ঋণ হিসেবে জরুরিভিত্তিতে ১০ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্টরা এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জরুরি বৈঠকেও বসে। বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংককে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান জানায়। উলেস্নখ করা যেতে পারে, তীব্র তারল্য সংকট, সুশাসনের অভাব, স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি, বিদেশি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রির চাপ, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব পুঁজিবাজারের সংকটের মূল কারণ বলেই অনেকে মনে করেন। বাজার বিশ্লেষকরা বারবার বলেছেন, শেয়ারবাজারে বুঝেসুজে বিনিয়োগ করা সমীচীন। শেয়ারবাজারে গিয়ে কিছু লোক যেমন অল্পকালের ভেতর কোটিপতি হয়েছেন, তেমনি আবার মূল পুঁজি হারিয়ে পথেও বসেছেন অনেকে। ইতিপূর্বে পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে আত্মহত্যার পথও বেছে নেন কয়েকজন, যা দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। সর্বোপরি বলতে চাই, পুঁজিবাজারে উত্থানপতন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ফলে বুঝেসুজে বিনিয়োগ করলে ক্ষতির আশঙ্কা কমে যায়। কোম্পানির অস্তিত্ব নেই, অথচ শেয়ারের দাম বাড়ছে- এ ধরনের চিত্রও পাওয়া যায়। অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী শেয়ারবাজারের মূল কথাই হচ্ছে ঝুঁকি। সুতরাং ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখেই কেবল এই বাজারে বিনিয়োগ করা সংগত। তবে রোববার সর্বোচ্চ উত্থান হলেও এ ব্যাপারে সবার সচেতন থাকতে হবে। অন্যদিকে পুঁজিবাজার যাতে স্থিতিশীল থাকে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নজরদারিই প্রত্যাশিত।