পাঠক মত

সমাজ হোক নৈতিকতা সমৃদ্ধ

প্রকাশ | ২১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

আল-মাহমুদ বাংলা বিভাগ সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ সাতক্ষীরা
সৃষ্টিকর্তার সব সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম সৃষ্টি মানুষ। যার স্বীকৃতি তিনি নিজেই দিয়েছেন। এই বিশ্বচরাচরে সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ সাধন করা। বিশ্বের সব পশু-পাখি, বৃক্ষ-লতা, কীটপতঙ্গ ও মহান সৃষ্টিকর্ম যার সবই মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টি। মানুষ যেন সুশৃঙ্খলভাবে, সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারে তার জন্যই এই ভুবন। তিনি প্রতিপালক আরও সৃষ্টি করেছেন মানুষের সঙ্গে মানুষের বন্ধন, যাতে মানুষ একে অপরের পরিপূরক ও সহযোগী হিসেবে বসবাস করতে পারে দুনিয়ায়। মানুষের মধ্যে দিয়েছেন স্নেহ, মমতা, ভালোবাসার সম্পর্ক। যার কারণে একজন মা নিজের জীবনের থেকে সন্তানকে বেশি ভালোবাসে। সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই নিজের জীবনের বিনিময়ে। একজন পিতা তার সব কিছুই উৎসর্গ করতে পারেন তার চোখের মণি সন্তানের জন্য। একজন ভাই তার অন্য ভাই-বোনের জন্য নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে দ্বিধা করে না। এই মমতার সম্পর্ক মহান স্রষ্টার এক পরম অনুগ্রহ। যে দানের বদৌলতে আজ আমরা সবাই একই সঙ্গে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে বসবাস করি। সব ধর্ম-বর্ণের বিভেদ ভুলে এক দেশমাতৃকার পদতলে বাস করি। ভাগাভাগি করি একে অপরের আচার-অনুষ্ঠান। আমরা সবাই যেন একটা জাতি। মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য হয়তো এটাই। আমরা সুন্দর, শান্তিপূর্ণভাবে এই দেশে, জগতে যেন বসবাস করি এটাই তার বৃহৎ চাওয়া। প্রত্যেক সৃষ্টির পেছনে সৃষ্টিকর্তার পৃথক উদ্দেশ্য রয়েছে, মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। যুগে যুগে সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত দূতগণ এই কথায় প্রচার করে গেছেন। প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) তার সমস্ত জীবনে এই বাণীর জন্যই কাজ করে গেছেন। বিশ্বের সকল মানুষ যেন একে অপরের ভাই ও পরিপূরক এই মূলমন্ত্র ছিল তার ধর্ম প্রচারের। যুগে যুগে সাহিত্যিক, লেখক সবার মূল তত্ত্ব ছিল 'মানুষ মানুষের জন্য'। ১৭ শতকের বাংলা সাহিত্যের মরমি কবি সম্রাট লালন শাহ মনুষ্যত্বের মর্ম উপলব্ধি করেছেন। তুলে ধরেছেন মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলেএ পৃথিবীতে সবাই যেন এক মায়েরই সন্তান।। কতই না সুন্দর তাদের অমিয় বাণী। আজ আমরা মহান সৃষ্টিকর্তার এত সব দানের পরও তার মৌলিক বাণীর অবজ্ঞা করে চলেছি প্রতিনিয়ত। মারামারি, হানাহানি থেকে শুরু করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা যেন আমাদের বড় নেশায় পরিণত হয়েছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি মহান সৃষ্টিকর্তার সব দানকে। ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ বিচার করার মতো শক্তি আমাদের লোপ পাচ্ছে। কিন্তু এমন হওয়ার কারণ কি? আমরা কি সভ্য-শান্ত সমাজের মানুষ নই? আমরা কি নৈতিক অবক্ষয় ও মূল্যবোধের চরম দুর্দশায় ভুগছি? আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কতই না নির্মম। কোনো বাদ-বিচার ছাড়াই অন্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে চলেছি। কতই না নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতর জীবে পরিণত হচ্ছি আমরা। সম্প্রতি ছেলে ধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হলো তাসনিম নামের নিষ্পাপ শিশুর মাকে। এ জাতি তাকে কি জবাব দেবে? একটি সুন্দর স্বপ্নের উপসংহার কতই না নিকৃষ্টভাবে টেনে দিলাম আমরা। এই জাতির শিক্ষিত তরুণ জনবলের এরূপ অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ করে সব অগ্রগতিকে। তাহলে কি আমরা প্রকৃত শিক্ষা পাচ্ছি না? আমরা হুজুগে মাতাল জাতি? বিবেক, বিচার-বুদ্ধির কি লোপ পেয়েছে আমাদের? কোনো একজনকে ছেলেধরা সন্দেহ করে 'ছেলেধরা' শব্দটি একবার উচ্চারণ করলেই লাখো মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়বে তার ওপর? কতই না নির্বোধ আমরা। সহানুভূতি, মায়া, মমতা আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে তা বলাই যায়। সুনাগরিকের বৈশিষ্ট্য আদৌ কি ছিল আমাদের মধ্যে? জাতিকে এই ক্রান্তিলগ্ন থেকে বের করে আনার দায়িত্ব আমাদের সবার।