হীরক-জ্যোতি বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সব সংগ্রাম ও সমৃদ্ধিতে দেদীপ্যমান দীপশিখা হয়ে থাকবেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যতদিন বাংলাদেশ আছে ততদিন বঙ্গবন্ধুর নাম কেউ মুছে দিতে পারবে না শত চেষ্টাতেও। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। তিনি হীরক-জ্যোতি হয়ে জ্বলবেন প্রতিটি বাঙালির মণিকোঠায়।

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সালাম সালেহ উদদীন
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫)। তার নেতৃত্বেই পরাধীন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। তিনি বহুবার তার ভাষণে এবং লেখায় এ কথা ব্যক্ত করেন। দীর্ঘদিন জনমত গঠন করে গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। বাঙালিকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দেন তিনি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন কিংবদন্তি জননেতা। বিশ্ব সম্প্রদায় তার কারণেই বাংলাদেশকে চিনেছে। তার আগে আর একজন বাংলা ভাষাকে বিশ্বের বুকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাথা। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি কর্মই বাঙালির জন্য অনুসরণীয়। বাঙালিকে তিনি নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। তার ভাষণ-বিবৃতির প্রতি লক্ষ্য করলে আমরা এই সত্যের উজ্জ্বল প্রতিধ্বনি শুনতে পাই। ২০২০ সালব্যাপী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপিত হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ঘিরে দেশে এবং দেশের বাইরে নানামুখী কর্মকান্ড সংঘটিত হবে। এসব কর্মকান্ডে বঙ্গবন্ধুর কীর্তিগাথা ত্যাগ, সংগ্রাম ও সফল নেতৃত্বের কথা বিশ্ববাসী জানতে পারবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বেও বাংলাদেশ সেভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিছু কিছু নিন্দুক এখনো বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বানোয়াট কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের কল্পিত মিথ্যাচারের জন্যই আজ ইতিহাসের পুনর্পাঠ জরুরি। নতুন প্রজন্মকে জানানো জরুরি- বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম, ত্যাগ, দেশপ্রেম ও ন্যায়নিষ্ঠতা এবং তার আদর্শবাদিতা। তিনি এ দেশের জন্য মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করেছেন তা অন্য কোনো বাঙালির পক্ষে সম্ভব ছিল না। পূর্ববঙ্গে তিনিই ছিলেন অবিসংবাদিক নেতা। কারণ স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেয়া তার মতো ক্যারিসমেটিক ও রাজনৈতিকভাবে দূরদর্শী নেতা একজনও ছিলেন না। তিনি ছিলেন অদ্বিতীয় ও আস্থাশীল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা শব্দ দুটি সমার্থক। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাধ্যমে এই দুটি নাম একসঙ্গে মিলে গেছে। এই দুইয়ের মিলিত স্রোতধারায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে একদিন প্রতিষ্ঠিত করবে। এক সময় তথাকথিত উন্নত রাষ্ট্র বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিল, তারাই এখন বাংলাদেশের প্রশংসা করছে- বলছে এশিয়ার বাঘ। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আহমদ ছফা শেখ মুজিবুর রহমান নামক প্রবন্ধে লিখেছেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ, একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল-প্রোজ্জ্বল এক অচিন্তিত পূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে।' তার কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করছি। আমরা প্রত্যেকেই জীবনে অনুসরণ করার জন্য আদর্শ মানুষ খুঁজি। বঙ্গবন্ধু বাঙালির আদর্শ। বঙ্গবন্ধু মানুষকে যেমন ভালোবাসতেন এ দেশের মানুষও তাকে ভালো বেসেছেন। বঙ্গবন্ধু শৈশবেই দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। স্কুলে ছাত্রাবস্থায় তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মুষ্টি ভিক্ষার চাল উঠিয়ে গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার খরচ বহন করা, বস্ত্রহীন পথচারী শিশুকে নিজের নতুন জামা পরিয়ে দিতেও তিনি কার্পণ্য করতেন না। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের দায়িত্ব নেওয়ার মতো মহৎ ও মানবিকতা দৃঢ়তার সঙ্গে ধারণ করেছিলেন সেই শৈশবেই- যা আমাদের জন্য অনুকরণীয়। আমরা জানি, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে, ধর্মের দোহাই দিয়ে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল। এর অতি উৎসাহী অগ্রনায়ক ছিলেন জিন্নাহ তথা মুসলিম লীগ। কিন্তু অল্প দিনেই বাঙালিরা বুঝতে পারে পাকিস্তান তাদের নয়। মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, এই ধারণাটিও ভ্রান্ত। প্রথমে ভাষার ওপরে আঘাত দিয়ে শোষণ শুরু করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী, এরপর শুরু হয় অর্থনৈতিক শোষণ, আঘাত আসে বাকস্বাধীনতার ওপর। রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম আন্দোলনে কারাবরণ করেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব। এরপর বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রতিটি বাঙালির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন পরাধীনতার শিকল ভাঙার মহামন্ত্র। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪'র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮'র সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬'র ৬ দফা ও পরে ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণ-অভু্যত্থানসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু। এর ভেতর দিয়ে তিনি আবির্ভূত হন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা তথা মহানায়ক হিসেবে। শেখ মুজিবুর রহমানকে সবাই ডাকতেন মুজিব ভাই বলে। এ নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন বন্ধু, নেতাকর্মী সবার কাছে। বৈদেশিক শক্তির কবল থেকে বাংলাদেশিরা দুই ধাপে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান হয় ১৯৪৭-এ, যখন ব্রিটিশ অধিকৃত ভারতবর্ষকে দুই রাষ্ট্রে (ভারত ও পাকিস্তান) বিভক্ত করা হয়েছিল। পাকিস্তান ছিল দুই শাখাতে বিভক্ত- পূর্ব ও পশ্চিম। এই দুই শাখার মধ্যবর্তী ১২ শো কিলোমিটার দূরত্বের কিছু বেশি জুড়ে বিস্তারিত ছিল ভারত। প্রাথমিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে বলা হতো পূর্ব বাংলা, যেটি ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশকে বিভক্ত করে সৃষ্টি করা হয়েছিল। পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ ছিল ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। ধর্মের এই বন্ধন ব্যতিরেকে দুই শাখার মধ্যে মিল ছিল খুবই কম। পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ ভাগের বসবাস ছিল পূর্ব পাকিস্তানে, যাদের সাংস্কৃতিক পটভূমি ছিল ভিন্ন। তারা ছিল মূলত বাংলাভাষী। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ চারটি পৃথক ভাষা ব্যবহার করত। ভৌগোলিক দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তান ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কাছে। সাংস্কৃতিক দিক থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণ ছিল মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের নিকটবর্তী। পাকিস্তানের শাসন শক্তির ভিত্তি ছিল পশ্চিম ভারতের মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়ের হাতে- যারা ১৯৪৭-এ ভারত থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে এসেছিল। এই অভিজাত শ্রেণি পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক ও সামন্ততান্ত্রিক শ্রেণির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। যদিও পাকিস্তান প্রথমদিকে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেছিল, পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম লীগের সদস্য। নীতিগতভাবে তারা ছিল অতি দুর্বল এবং সহজেই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা নিপুণভাবে পরিচালিত হয়ে যেত। ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এরপর থেকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক শক্তি রাষ্ট্রপতির হাতে চলে আসে এবং পরে সামরিক বাহিনীর হাতে। ১৯৫০ দশকে এটা লক্ষ্য করা হয়েছিল যে, যখন প্রধানমন্ত্রীর পদে কোনো পূর্ব পাকিস্তানিকে মনোনীত করা হতো, তখন তাকে অতি দ্রম্নত পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সরিয়ে দিত। ১৯৫৮-১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তান সামরিক শাসক দ্বারা পরিচালিত ছিল। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ভাষা শহিদদের জীবন দিতে হলো। ১৯৫৬ সালে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র স্বীকার করে নিতে বাধ্য হলো। প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল নামেমাত্র স্বীকার। বাংলাভাষাকে পাকিস্তানি আমলে কখনই পূর্ণ মর্যাদা দেয়া হয়নি। পাকিস্তানের জন্মের শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে বশীভূত করা হয়। যদিও পূর্ব পাকিস্তান পাট রপ্তানির মাধ্যমে সমগ্র পাকিস্তানের সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত, পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পেছনে তার অধিকাংশই বিনিয়োগ করা হতো। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্য এবং নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে। গণমানুষের নেতা হিসেবে জনগণের মুক্তিদাতা হিসেবে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' সেই মুক্তি ও স্বাধীনতা ছাড়া বাংলার জনগণের জন্য বঙ্গবন্ধুর আর কোনো চিন্তাভাবনা ছিল না। কার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বীর বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানি সৈন্যরা পরাজয়ের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গণহত্যা চালিয়ে যায়। তারা হত্যা করে এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার এটা ছিল জঘন্য ষড়যন্ত্র। দ্বিতীয় ষড়যন্ত্র সফল হয় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে। মোশতাক-জিয়াচক্র কেবল ব্যক্তি মুজিবকেই হত্যা করেনি। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তির ওপর আঘাত হানে। পঁচাত্তরের ক্ষমতাসীন সামরিক-বেসামরিক এলিটচক্র বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শগত অবস্থান ও লক্ষ্য থেকে সরিয়ে এনে একটি ধর্ম-সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে। ক্ষমতার পালাবদলের পর শুরু হয় অভাবিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তার বীভৎস রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু বেশি শক্তিশালী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধু মানেই প্রতিটি বাঙালির মনের মুকুরে ভেসে ওঠে এক বীর নায়কের প্রতিচ্ছবি। ভেসে ওঠে বাংলার প্রতিটি নির্যাতিত মানুষের প্রতি দরদ ও ভালোবাসা সিক্ত একটি মানুষের মুখ। যে অসাধারণ ধৈর্য, সাহস ও দৃঢ়তা নিয়ে তিনি তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে অসংখ্য অগ্নি-পরীক্ষার মধ্যদিয়ে পাকিস্তানি শাসক ও শোষক চক্রকে রুখে দাঁড়িয়ে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েছেন, তার তুলনা বিশ্বে বিরল। তার অদম্য সাহস, ইস্পাত-কঠোর সংকল্প, আদর্শ ও লক্ষ্যের প্রতি নিষ্ঠা এবং জনগণের ঐক্য ও সংহতিতে প্রগাঢ় বিশ্বাস থেকে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার মুহূর্তেও তিনি এক বিন্দু সরে আসেননি। তিনিই বীর যিনি মৃতু্যকে ভয় পান না। আমৃতু্য স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য নিমগ্ন ছিলেন বলেই তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি, তিনিই বাঙালির 'জাতির পিতা'। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এই মৌলিক অধিকারগুলো পূরণের মাধ্যমে বাঙালি উন্নত জীবন পাবে, দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পাবে, সেই চিন্তাই তিনি প্রতিনিয়ত করতেন। বাংলার মানুষের মুক্তির এই মহানায়ক মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে যখন জাতীয় পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন তখনই নৃশংস ঘাতকের নির্মম বুলেট স্ত্রী-পুত্র-পরিজনসহ কেড়ে নিল তার প্রাণ! আমরা নিশ্চিত, অনাগত দিনগুলোতেও বঙ্গবন্ধু হয়ে থাকবেন বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য অনিঃশেষ বাতিঘর। বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশের নন, গোটা বিশ্বব্যবস্থায় বিবেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, 'বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত- শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।' তাই আজও পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে স্বাধীনতা বা স্বাধিকারের প্রশ্ন এলে একজন শেখ মুজিবের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ইতিহাসে যার স্থান সুনির্দিষ্ট ও স্বীয় মহিমায় সমুজ্জ্বল, তাকে অস্বীকারের মূঢ়তা বিপজ্জনক। বঙ্গবন্ধু কোনো নির্দিষ্ট দলের নন, তিনি সবার। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক। এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সব সংগ্রাম ও সমৃদ্ধিতে দেদীপ্যমান দীপশিখা হয়ে থাকবেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যতদিন বাংলাদেশ আছে ততদিন বঙ্গবন্ধুর নাম কেউ মুছে দিতে পারবে না শত চেষ্টাতেও। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন। তিনি হীরক-জ্যোতি হয়ে জ্বলবেন প্রতিটি বাঙালির মণিকোঠায়। সালাম সালেহ উদদীন: কবি কথাসাহিত্যিক সাংবাদিক ও কলাম লেখক