দুটি আলোচিত মামলার রায়

বাস্তবায়ন হোক

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা এবং জনজীবনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে হলে যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা রোধ করার কোনো বিকল্প নেই। সঙ্গত কারণেই বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নানা সময়েই ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে অপরাধমূলক ঘটনা। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, তিন দশক আগে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভার আগে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় পাঁচ আসামিকে মৃতু্যদন্ড দিয়েছে আদালত। সোমবার বিকালে চট্টগ্রামের বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন চার আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। দন্ডিতরা হলেন- চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কোতয়ালি অঞ্চলের তৎকালীন পেট্রোল ইনসপেক্টর জে সি মন্ডল, কন্সটেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, শাহ মো. আবদুলস্নাহ ও মমতাজ উদ্দিন। এ ছাড়া 'বিপজ্জনক অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আঘাত সৃষ্টির' দায়ে দন্ডবিধির ৩২৬ ধারায় পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদন্ড দিয়েছেন বিচারক। প্রসঙ্গত বলা দরকার, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বন্দরনগরীর লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভার দিন বেলা ১টার দিকে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাক আদালত ভবনের দিকে এগোলে নির্বিচার গুলি ছোড়া শুরু হয়। এই ঘটনা কতটা ভয়ানক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেদিন আইনজীবীরা আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে ঘিরে মানববেষ্টনী তৈরি করে তাকে নিরাপদে আইনজীবী সমিতি ভবনে নিয়ে যাওয়ায় তিনি রক্ষা পান। আর ওই ঘটনায় নিহতদের কারও লাশও পরিবারকে নিতে দেওয়া হয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল। দুই দফা তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর আট পুলিশ সদস্যকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। গত ১৪ জানুয়ারি ৫৩তম সাক্ষী আইনজীবী শম্ভুনাথ নন্দীর সাক্ষ্য দেওয়ার মধ্যদিয়ে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। একই সঙ্গে উলেস্নখ্য, প্রায় দুই দশক আগে ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিচার শেষে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ১০ জঙ্গির ফাঁসির রায় এসেছে। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মামলার জীবিত ১২ আসামির মধ্যে দুজনকে খালাস দেন তিনি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উলেস্নখ্য, ২০০১ সালে যে দিনটিতে বোমা হামলা চালিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছিল, ১৯ বছর পর সেই একই তারিখে রায় দিল আদালত। বিচারক তার রায়ে বলেছেন, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য হরকাতুল জিহাদের এই জঙ্গিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে এই আদালত মনে করে।' তথ্য মতে, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে সিপিবির লাল পতাকা সমাবেশে এই বোমা হামলা হয়েছিল। তাতে ৪ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ দিন পর মারা যান আরেকজন। এ ছাড়া এই হামলায় আহত হয়েছিল শতাধিক। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, তিন দশক আগে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভার আগে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলা এবং প্রায় দুই দশক আগে ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনার রায় যখন এলো- তখন রায়ের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে আমরা বলতে চাই, এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্টদের যেমন সতর্ক থাকতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে- তেমনিভাবে আইনের শাসন বজায় রাখতে হবে। যে কোনো অপরাধেই অপরাধীর যেন শাস্তি হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের মধ্যদিয়ে এমন ভয়াবহ অপরাধমূলক ঘটনা যেন আর না ঘটে এবং দেশে যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।