মুজিববর্ষে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়

মুজিববর্ষে আমাদের সব অনৈতিকতা ভুলে গিয়ে সুন্দর আগামীর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে শপথ নিতে হবে। দুর্নীতি, ঘুষ, অপকর্ম, অনিয়মের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে সত্য এবং সততার পথে চলতে হবে। তবেই মুজিববর্ষ সার্থক হবে।

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

আজহার মাহমুদ
বাংলার মানুষ এখন প্রহর গুনছে। হাতের আঙুলে গুনছে আর ক'দিন আছে জাতির জনকের জন্মশতবর্ষ আসতে। অপেক্ষায় আছে পুরোবিশ্ব। লক্ষ্য একটাই মুজিববর্ষ। বাঙালি জাতির হৃদয়ে যার বসবাস, যাকে হৃদয়ে ধারণ করে মানুষ এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পায় আগামী ১৭ মার্চ তার জন্মদিন। জন্মদিনের চাইতেও বড় বিষয় জন্মশতবর্ষ। যার জন্য আমরা আজ সাজানো এই সোনার বাংলা দেখছি, তার জন্মশতবর্ষে আমরা কি কিছুই করতে পারি না? অনেকেই হয়তো সেদিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন। কিংবা লোক দেখানো কিছু ভালো কাজ করবেন। কিংবা পথশিশু, অসহায় মানুষকে একবেলা খাবার খাওয়াবেন। অথবা বক্তব্য, সভা, মিছিল, মাহফিল এসব। কিন্তু এসবই কি মুজিববর্ষের সার্থকতা! বঙ্গবন্ধু কি এসব আমাদের কাছ থেকে চেয়েছেন? মৃতু্যর আগে তিনি কাউকে তো বলে যাননি- 'আমার জন্য মিছিল, সভা, কিংবা একদিনের কর্মসূচি করিও'। এসব আমাদের মনগড়া কাজ। প্রকৃতপক্ষে জাতির জনক চেয়েছেন একটি সোনার বাংলা। তিনি চেয়েছেন বাংলার মানুষ যেন সুখে এবং শান্তিতে থাকে। এর কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে সেটা দেশের মানুষই ভালো বিচার করতে পারবে। তবে মুজিবর্ষে আমাদের শপথ হতে হবে- দুর্নীতিমুক্ত একটি দেশ গড়বো। এমন কিছু করতে পারলে মুজিববর্ষ হবে সফল। আমি আর আপনি হয়তো শেখ মুজিবকে দেখছি না। কিন্তু তিনি আমাকে আপনাকে ঠিকই দেখছেন। আপনি যদি পরকাল কিংবা আখেরাত বিশ্বাস করেন তাহলে মনে রাখবেন এই মহান নেতা সেদিন কিছু মানুষকে ক্ষমা করবে না। সেদিন তিনি তাদের নামে সৃষ্টিকর্তাকে নালিশ দেবেন। কারণ তার সোনার বাংলাকে ধ্বংস করার জন্য যারা দুর্নীতি করেছেন তাদের তিনি কখনো ক্ষমা করবেন না। যার জীবন-যৌবন সবকিছু এই বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন তার জন্য আমরা কতটুকু করতে পেরেছি? তার জন্য বলতে, তিনি তো টাকা, ধনসম্পদ, বাড়ি-গাড়ি কিছুই চাননি। এমনকি নিজের জীবনটাও চাননি। বেঁচে থাকলে তার এসব থাকতো। তার পরিবারের জীবনও তিনি দেশের জন্য ত্যাগ করে দিয়েছেন। আজ তার দুই মেয়ে রয়েছে। তাদের জন্যও তিনি কিছু চাননি। তাহলে আমরা তার জন্য কি করতে পারি? আমরা তার জন্য সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারি। তিনি চেয়েছেন একটি সোনার বাংলা। যেখানে থাকবে না কোনো অন্যায়, অপরাধ আর রাহাজানি। থাকবে সম্প্রীতি, মায়া, বন্ধন, ভালোবাসা আর একতা। কিন্তু আজ আমাদের দেশে এর ছিটেফোটাও নেই। থেমে নেই কোনো অপরাধ। এইতো বছরের প্রথম ১০ দিনেই পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী ৬টি ধর্ষণ হয়েছে। পত্রিকার রিপোর্ট ছাড়া আরও কটা হয়েছে সেটা চিন্তা করে আর কষ্ট পেতে চাই না। তা ছাড়া মাদক, ঘুষ, দুর্নীতির মতো বড় বড় এসব অপরাধ চলছেই। সবচাইতে বেশি কষ্ট লাগে যখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে কিছু নোংরা লোক এ ধরনের কাজ করে তখন। বঙ্গবন্ধু একজন আইডল। তার দেখানো পথে যদি বাংলাদেশ চলতে পারে তাহলে এ দেশ সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ দেশে পরিণত হবে। কিন্তু আফসোস, আমরা তার দেখানো পথে চলতে পারছি না। তাই বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষে আমাদের শপথ হতে হবে, দেশকে এগিয়ে নেওয়া। সবাই যেন অন্যায় এবং অনিয়মকে 'না' বলি। অন্তত বঙ্গবন্ধুকে যারা ভালোবাসি, তার প্রতি যারা শ্রদ্ধাশীল তারা যেন অন্তত অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকি। আমরা জানি, মানুষ মাত্রই ভুল। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এসব ভুলের জন্য ক্ষমা করবেন এটাও আমরা জানি। কিন্তু ভুল আর অপরাধ এক নয়। যারা জেনেশুনে দেশের এবং দেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানী করবেন তাদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই। দেশের মানুষ হোক আর বঙ্গবন্ধু হোক কেউ ক্ষমা করবে না। আর কেউ ক্ষমা না করলে সৃষ্টিকর্তাও ক্ষমা করবেন না। তাই লোক দেখানো উৎসব বাদ দিয়ে মানুষের উপকার এবং উন্নয়নের ব্রত নিয়েই মুজিববর্ষকে স্বাগত জানাতে হবে আমাদের। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছাড়াও আরও বেশকিছু ভাষণ রয়েছে। সবখানেই তার মুখে একটি কথা রয়েছে। সেটি হলো দেশ এবং দেশের মানুষের কথা। এ দেশের মানুষকে বঙ্গবন্ধু সবসময় বিশ্বাস করেছেন। একটি ভাষণে তিনি বলেছেন, 'আমি যখন জেলে ছিলাম তখন তোমরা আমার কথা রেখেছো, এখনও তোমরা আমার কথা রাখবা। এই যে অগাধ বিশ্বাস, এটা একমাত্র আত্মার সম্পর্ক থাকার কারণে হয়। হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসার বন্ধন থাকলে এমনটা হয়। আর দেশের মানুষও তার কথা রাখার কারণ হচ্ছে তার প্রতি দেশের মানুষেরও অগাধ বিশ্বাস ছিল। বঙ্গবন্ধুকে যারা কাছ থেকে দেখেছে তারা কখনো তার বিপক্ষে কথা বলতে পারবে না। যারা দেশের এবং দেশের মানুষের বিপক্ষে ছিল, তারাই বঙ্গবন্ধুর শত্রম্ন ছিল। সেই শত্রম্নরাই বঙ্গবন্ধুকে শহিদ করেছিল। ১৫ আগস্টের ভয়ঙ্কর সে রাতে বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবার হয়েছেন শহিদ। সন্তানরা যেমন পিতা হারিয়ে এলোমেলো হয়ে যায়, ঠিক তেমনি দেশের মানুষ এবং দেশ হয়ে পড়েছিল সেদিন এলোমেলো। এলোমেলো এই দেশকে তারই কন্যা শেখ হাসিনা আবার সোনার বাংলায় রূপান্তর করার চেষ্টা করছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন দেশনেত্রী শেখ হাসিনা। তবুও কোথায় যেন কিছু একটা গন্ডগোল হচ্ছে। দেশের মানুষগুলো যেন কেমন কেমন হয়ে গেছে। কেউ যেন কারো সঙ্গে এক নেই। সত্যটা আজ কেউ বলতে চায় না। আর লোক দেখানো কাজে দেশের মানুষরা বেশি উৎসাহী হয়ে পড়েছে। নীতি-নৈতিকতা ভুলে গিয়ে আমরা কেমন যেন হয়ে পড়েছি। মুজিববর্ষে আমাদের সব অনৈতিকতা ভুলে গিয়ে সুন্দর আগামীর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়ে শপথ নিতে হবে। দুর্নীতি, ঘুষ, অপকর্ম, অনিয়মের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে সত্য এবং সততার পথে চলতে হবে। তবেই মুজিববর্ষ সার্থক হবে। আজহার মাহমুদ: প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক