চীনের ভাইরাস নিয়ে গভীর শঙ্কা

কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চীনের রহস্যময় ভাইরাসের কারণে এশিয়াজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মরণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে চারজনের মৃতু্যর খবর চীন নিশ্চিত করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। আর এ খবরে গোটা এশিয়াজুড়ে নানার অস্থিরতা বিরাজ করছে। চীনের ভাষ্যমতে, নতুন নিউমোনিয়া সদৃশ প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের নাম করোনাভাইরাস। আর বিদ্যমান এ পরিস্থিতিকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে কিনা তা নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা-বিশেষজ্ঞরা বুধবার জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ভাইরাসটির সঙ্গে ২০০২-০৩ সালের দিকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সিভিয়ার অ্যাকুট রেসপারেটরি সিনড্রোমের (সার্স) সাদৃশ্য রয়েছে। সংগত কারণে, এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও নানান শঙ্কা, উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ২০০২-০৩ সালে চীন ও হংকংয়ে ছড়িয়ে পড়ে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স)। বর্তমানের এই ভাইরাসের সঙ্গে পূর্বের ওই সংযোগ থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই সময় ৬৫০ জন মানুষের মৃতু্য হয়েছিল। আর চীন থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়ে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮০০ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল সার্স। স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের ধারণা চীনের উহান শহরের একটি সিফুড মার্কেট থেকে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। চীনের স্থানীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্যে জানা যায়, এ শহরে এক কোটি ১০ লাখ মানুষের বাস। চারজনের মৃতু্যর পাশাপাশি নতুন করে আরও ১৩৬ জন রোগীকে শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চীনে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্য দাঁড়াল ২০১ জনে। স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এখন থেকে সর্বোচ্চ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে তা পূর্বের ঘটনার চেয়েও ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। উদ্বেগের কারণ হলো, এ ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে দ্রম্নত। আর গেস্নাবালাইজেশনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রম্নততার সঙ্গে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। চীন এখন পর্যন্ত ভ্রমণের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। তবে হংকংয়ের মধ্যে চীন থেকে আগত ভ্রমণকারীদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্তকরণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। উহান থেকে আমেরিকার সানফ্রানসিসকো, নিউইয়র্ক ও লস এঞ্জেলসে সরাসরি বিমান যোগাযোগ আছে। উহান থেকে আগত যাত্রীদের শরীরে ভাইরাস আছে কী না, তা পরীক্ষা শুরু করেছে আমেরিকা। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, চিয়াং মাই এবং ফুকেটে আগমনকারীদের জন্যও এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এ জন্য বিমানবন্দরে ভাইরাস শনাক্তের জন্য স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। উলেস্নখ করা যেতে পারে, চীনা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে এ ভাইরাসটি আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শ থেকেও ছড়াতে পারে। এর প্রমাণ সে দেশের ১৫ স্বাস্থ্যকর্মী প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া। ফলে বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ থাকে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, 'মানবদেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে'- এটা জানার পর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া অমূলক নয়। -ইতোমধ্যে এ অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতিতেও উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। ২০০৩ সালের পর থেকে চীনাদের ভ্রমণের হার অনেক বেড়েছে; যে কারণে এবার সার্স সাদৃশ ভাইরাসটির সংক্রমণ আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন লন্ডনভিত্তিক আইএইচএস মার্কেটের এশিয়া প্যাসিফিক অংশের প্রধান অর্থনীতিবিদ রাজীব বিশ্বাস। তবে, ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া খতিয়ে দেখতে চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশনের গঠন করা বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ঝং নানশান অবশ্য এখনই এত উদ্বেগের কিছু দেখছেন না। সর্বোপরি বলতে চাই, ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই সতর্কতা জরুরি। বাংলাদেশে এ ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকাতে বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চীন থেকে আসা সরাসরি ফ্লাইটগুলোর যাত্রীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। শুধু চীন থেকে নয়; যেহেতু চীনারা অন্যদেশও ভ্রমণ করেন ফলে অন্যান্য দেশের যাত্রীদের ক্ষেত্রেও একই সতর্ককতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা, সে বিষয়টি কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখতে পারেন। আমরা মনে করি, এই ভাইরাস যাতে কোনোভাবেই বাংলাদেশে সংক্রমণ ঘটাতে না পারে তার জন্য আরও যে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তা অব্যাহত রাখা শ্রেয়।