শিক্ষা, প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত নেই ৭৪ লাখ

যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জনসংখ্যাবহুল দেশে কর্মসংস্থানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল যে, দেশে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সি যুবক-যুবতীর সংখ্যা ২ কোটি। অথচ এরমধ্যে ৭৪ লাখ কোনো শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত নেই। সঙ্গত কারণেই বিষয়টি উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। জানা যাচ্ছে, এর ফলে আন্তর্জাতিক যুব সূচকে ২০১৬ এ ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ১৪৬তম। সিপিডির এক জরিপে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তরোণের জন্য সরকারকে যুব নীতি গ্রহণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে- যা আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত 'প্রান্তিক যুবসমাজের কর্মসংস্থানে সরকারি পরিষেবার ভূমিকা' শীর্ষক ওই জরিপের প্রতিবেদন মঙ্গলবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক। উলেস্নখ্য, জাতীয় যুব নীতিতে বর্ণিত ১৬টি ক্যাটেগরির প্রান্তিকগোষ্ঠীর মধ্যে চার ধরনের মানুষের ওপর জরিপটি চালানো হয়। এ ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁওয়ে সমতলের আদিবাসী, শহরের বস্তিবাসী, মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও সিলেটে অবস্থানরত শহুরে যুবগোষ্ঠীর ৩৩৩ জনকে বেছে নেওয়া হয়। আমরা মনে করি, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সি যুবক-যুবতীর সংখ্যা ২ কোটির ভেতর যদি ৭৪ লাখ কোনো শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত না থাকে তবে বিষয়টি সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টদের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে দ্রম্নত। এমন বিষয় উঠে এসেছে যে, গবেষণায় অংশ নেওয়াদের ৬০ শতাংশ মনে করেন, গ্রামীণ প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো কেবল নামমাত্র দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে ঠিকমতো প্রশিক্ষণের ক্লাস হয় না, ভালো প্রশিক্ষক নেই। এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ভালো প্রশিক্ষকের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এ ছাড়া আমলে নিতে হবে, বস্তিবাসী ও আদিবাসীদের মধ্যে শতভাগ যুবগোষ্ঠী এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮ শতাংশের কোনো বসতভিটা না থাকার তথ্য তুলে ধরে সিপিডির গবেষক বলেছেন, বাসস্থান ও জীবিকার ব্যবস্থা উভয়ই তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে (বস্তি) অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ নানা দিক থেকেই এড়িয়ে যাচ্ছে। শিক্ষারও বিস্তার ঘটছে। কিন্তু শিক্ষায় সরকার অনেক সাফল্য অর্জন করলেও প্রান্তিক যুবকরা এর সুফল পুরোপুরি পায়নি এমনটিও আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া সমতলের আদিবাসী ও সিলেট অঞ্চলের শহুরে যুবগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ শতাংশ মনে করেন তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয় মানের প্রতিষ্ঠানগুলো চেয়ে অর্ধেক নিম্নমানের- এই বিষয়টিকে সামনে রেখেও সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। উঠে এসেছে যে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা মনে করেন, তাদের বিজ্ঞান, গণিত বিষয়ের শিক্ষকের অভাব। এ ছাড়া স্কুলের বেতন ছাড়াও পড়ালেখাকেন্দ্রিক অন্যান্য খরচ বহন করতে না পারার কারণে অনেকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন বলেও জানা যাচ্ছে- ফলে সামগ্রিক এই বিষয়গুলো এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলেই আমরা মনে করি। সর্বোপরি বলতে চাই, বেকারত্ব বৃদ্ধি কোনোভাবেই সুখকর নয় এবং ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সি ৭৪ লাখ কোনো শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে বিষয়টি অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। দেশকে এগিয়ে নিতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থানের সুঙ্গে যুক্ত করতে উদ্যোগী হতে হবে। সার্বিক চিত্র আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।