বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশ্বিক সূচকে ৮ ধাপ অগ্রগতি পূর্ণ গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে

নতুনধারা
  ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

বিশ্ব গণতন্ত্র সূচকে এবার আট ধাপ এগোলো বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৬৫টি দেশ ও দুটি ভূ-খন্ডের এই সূচকে গত বছর ৮৮তম অবস্থানে থাকলেও এ বছর এক লাফে বাংলাদেশ উঠে এসেছে ৮০তম স্থানে। বুধবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তৈরি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ইতিবাচক অগ্রগতির এই চিত্র। গত প্রায় এক দশক ধরে স্বৈরতান্ত্রিক ও ত্রম্নটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক অবস্থার মাঝামাঝি 'হাইব্রিড রেজিম' তালিকায় রাখা হয়েছিল বাংলাদেশ।

এ বছর আট ধাপ উন্নয়ন ঘটলেও বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থাকে তৃতীয় শ্রেণির অর্থাৎ মিশ্র শাসনের অন্তর্ভুক্ত করেছে ইআইইউ। তবে আট ধাপ উত্তরণকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবেই বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে নানান সময়ে বিরূপ আলোচনা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, গণতন্ত্র নিয়ে এখনো ইতিবাচক আলোচনার চেয়ে নেতিবাচক আলোচনা অধিক শোনা যায়। সরকার যে এখনো গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারেনি, তা এসব আলোচনা থেকে স্পষ্ট হতে পারে। তবে বৈশ্বিক সূচকে যেহেতু প্রতিবছরই উত্তরণ ঘটছে, সেহেতু বাংলাদেশ যে সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের পথেই এগিয়ে চলেছে সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণেরও সুযোগ থাকে না। ব্রিটিশ এ সাময়িকীর গবেষণা শাখা ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০০৬ সাল থেকে বিশ্ব গণতন্ত্র পরিস্থিতি পাঁচটি মানদন্ডে ১০ স্কোরের ভিত্তিতে প্রকাশ করে আসছে। মানদন্ডগুলো হলো-নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার। যেহেতু সূচকে উন্নতি হয়েছে, ধরেই নিতে হবে এসব ক্ষেত্রে ভালো করছে বাংলাদেশ। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সূচকে এবারও ৯.৮৭ স্কোর নিয়ে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। এরপরই আছে ৯.৫৮ স্কোর নিয়ে আইসল্যান্ড। তৃতীয় স্থানে রয়েছে সুইডেন, দেশটির স্কোর ৯.৩৯; ৯.২৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ নিউজিল্যান্ড এবং ৯.২৫ স্কোর নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড। এ ছাড়া ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো ১৬৬তম, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ১৬৫তম। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে, শ্রীলংকা ৬.১৯ স্কোর নিয়ে গত বছর ৭১তম অবস্থানে থাকলেও এবার দুই ধাপ অগ্রগতি হয়ে ৬৯তম অবস্থানে উঠে এসেছে। ৪ দশমিক ১৭ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান গত বছর ১১২তম থাকলেও এবার ৪.২৫ স্কোর নিয়ে ১০৮তম অবস্থানে উঠে এসেছে। সব মানদন্ডের সূচক মিলিয়ে কোনো দেশের গড় স্কোর যদি ৮-এর বেশি হয়, তাহলে সেই দেশে 'পূর্ণ গণতন্ত্র' রয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়। ৬ থেকে ৮-এর মধ্যে স্কোর হলে সেটাকে 'ত্রম্নটিপূর্ণ গণতন্ত্র' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, স্কোর ৪ থেকে ৬-এর মধ্যে থাকলে ধরে নেয়া হয় 'মিশ্র শাসন' (হাইব্রিড রেজিম)। আর স্কোর ৪-এর নিচে হলে সে দেশে 'স্বৈরশাসন' চলছে বলে ধরে নেয়া হয়।

সাময়িকীটি তাদের প্রতিবেদনে উলেস্নখ করেছে, বিশ্বের মাত্র ২২টি দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে; যেখানে প্রায় ৪৩০ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। এ ছাড়া বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী এখনো কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার অধীনে তাদের জীবন অতিবাহিত করছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে আছে বলেই প্রতীয়মান হয়। তবে এই সূচকে বাংলাদেশের আট ধাপ অগ্রগতি হলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি স্কোরের। এ বছর বাংলাদেশের স্কোর ৫.৮৮। গত বছর এই স্কোর ছিল ৫.৫৭। আর ২০১৮ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫.৪৩। বাস্তবতা হলো, সূচকে অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশ এখনো 'মিশ্র শাসন' বা 'হাইব্রিড রেজিম' পার হতে পারেনি। সংগত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার দেশের গণতন্ত্রের উন্নয়ন ঘটাতে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করা। বলাই বাহুল্য, দেশের মানুষ নির্বাচন পছন্দ করেন এবং ভোটের মাধ্যমে মতপ্রকাশ করার এই সংস্কৃতির কারণে দেশের গণতন্ত্রের জন্য আশাবাদের একটি জায়গা। বিগত কিছু নির্বাচনের কারণে জনমনে নানা আশঙ্কা আর সন্দেহ থাকলেও দিনে দিনে পরিস্থিতি পরিবর্তন হচ্ছে বলে আমাদের ধারণা। সামনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন, যে পাঁচটি মানদন্ডে সূচক নির্ধারণ তার আরেকটি পরীক্ষা আসন্ন সরকারের জন্য।

সর্বোপরি মনে করি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় গণতন্ত্রই শেষ করা। সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলসহ দেশের জনগণের সচেতনতায় দেশের গণতন্ত্র আরও অগ্রসর হোক, এই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<85636 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1