ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার

বাড়ছে দুর্ঘটনা

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশে যাতায়াতজনিত দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে কারা এর জন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, চট্টগ্রাম নগরের যত্রতত্র ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা। অনেক স্থানে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও সে পথে চলাচলে আগ্রহ নেই কারও। আবার অনেক স্থানে ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় ব্যস্ত সড়কে ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছে মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। রাজধানী ঢাকার রাজপথেও একই দৃশ্য বিদ্যমান। ফলে যত্রতত্র দুর্ঘটনা ঘটছে। রাজধানীতে ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্ত্বেও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করছে। চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে পার হচ্ছে অনেকেই। তারা সিগন্যাল অমান্য করছে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। আসলে মানুষ অস্থির সময় অতিক্রম করছে। তাদের মধ্যে কোনো স্থিরতা নেই। ধৈর্য ধরে সাবধানে রাস্তা পার হওয়া যায় সহজেই। কিন্তু সেটি করতে নারাজ তারা। একটি কথা প্রায়ই চোখে পড়ে। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি। অথচ আমরা জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে ঝুঁকি নিই এবং দুর্ঘটনায় পতিত হই, জীবন হারাই। অনেকেই আবার সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। নগর পরিকল্পনাবিদদের বিভিন্ন সময়ের জরিপে দেওয়া হয়েছে বহু প্রস্তাবনা। কিন্তু তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির জরিপ অনুযায়ী, বিদায়ী ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮৫৫ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১৩ হাজার ৩৩০ জন। দুর্ঘটনার পরিমাণ ২০১৮ সালের সমপরিমাণ হলেও প্রাণহানি ৮.০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৯৮৯ জন চালক, ৮৪৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮০৯ জন শিক্ষার্থী, ১১৫ জন শিক্ষক, ২১৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৮৯৪ জন নারী, ৫৪৩ জন শিশু, ৩৬ জন সাংবাদিক, ২৬ জন চিকিৎসক, ১৬ জন আইনজীবী এবং ১৫৩ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে- মূল সড়কের ওপর দিয়ে পথচারীদের যাওয়া-আসাকে। ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের কারণে দিনে দিনে দুর্ঘটনার হার বাড়ছে। এ ছাড়া বাসগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব শহরে সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা আনতে নগরীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করলে, দুর্ঘটনা অনেকটাই কমবে বলে মনে করেন তারা। \হমনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দুর্ঘটনায় মৃতু্যর হার কমাতে হলে দোষীদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণকেও নৌ, রেল ও সড়ক পথে ভ্রমণ এবং রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধ করতে।