করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চীনের রহস্যময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৪১ জনের মৃতু্যর খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের কারণে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা-বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন। এ ভাইরাসটির সঙ্গে ২০০২-০৩ সালের দিকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সিভিয়ার অ্যাকুট রেসপারেটরি সিনড্রোমের (সার্স) সাদৃশ্য রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। চীনের উহান প্রদেশে এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর তা এখন পর্যন্ত জাপান, থাইল্যান্ড, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ানে ছড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের নতুন এই সংস্করণ শুরু হচ্ছে জ্বর দিয়ে। তারপর কাশি থেকে গলাব্যথা। এমনকি কারও কারও তীব্র শ্বাসকষ্টের পর নিউমোনিয়ায় পরিণত হয়। বলাই বাহুল্য, কয়েকদিন ধরেই বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই ভাইরাস। বলা হচ্ছে, এই ভাইরাস এর আগে কখনো মানুষের শরীরে ছড়ায়নি। বর্তমান পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে- পুরোবিশ্বেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চীনে এই ভাইরাসে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। যদিও দেশটির সরকারের দাবি শ'দুয়েক মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের ধারণা এই সংখ্যা কয়েক হাজার। এরই মধ্যে আক্রান্তদের ৪১ জন মারাও গেছেন। সংখ্যা নিয়ে চীনের ভিন্ন অবস্থান হলেও তারা প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে, মানুষ থেকে মানুষের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সঙ্গত কারণেই এই ভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ থাকা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। তবে আশার কথা ভাইরাসটি প্রতিরোধ যোগ্য। দ্রম্নত রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি চিকিৎসা এবং এ নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে পারলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে করোনাভাইরাস- এমন দাবিও বিশেষজ্ঞদের। আমরা লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশে এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে দ্রম্নততার সঙ্গেই কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে রোগ ছড়ানোর অন্যতম উৎস দেশগুলো থেকে আসা মানুষকে বিমানবন্দরেই থার্মাল স্ক্যানিং শুরু করেছে। বিমানকর্মীদের পাশাপাশি কাজ করছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই তারা কোনো কোনো ব্যক্তিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সরকারের এই উদ্যোগকে আমরা অত্যন্ত সঠিক এবং সময়োপযোগী বলে মনে করি। কেননা এ ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাদের শান্ত রেখে সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তবে উদ্বেগের কারণ হলো- এ ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে দ্রম্নত। আর গেস্নাবালাইজেশনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রম্নততার সঙ্গে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে- বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। এ ছাড়া আরেকটি গণমাধ্যমে চীনের বরাত দিয়ে উদ্ধৃত খবরে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ৫৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। শত শত মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মৃতের সংখ্যা যাই হোক, সর্বস্তরে সতর্কতাই প্রত্যাশিত। চীনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে চীনের বাংলাদেশ মিশন। কেননা, শুধু উহানেই ৩০০ থেকে ৪০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বসবাস করছেন। বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। চীনের প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়ে দূতাবাস চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চীনের কোনো বিদেশি নাগরিক এ ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। উলেস্নখ করা যেতে পারে, ভাইরাসটি আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শ থেকেও ছড়াতে পারে। এর প্রমাণ ইতোমধ্যে সে দেশের ১৫ স্বাস্থ্যকর্মী প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া। ফলে বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। করোনাভাইরাসের কারণে এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতিতেও উদ্বেগের সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই সতর্কতা জরুরি। এ ভাইরাস যাতে কোনোভাবেই বাংলাদেশে সংক্রমণ ঘটাতে না পারে তার জন্য আরও বাংলাদেশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চিত করেই বলা যায়, এ ক্ষেত্রে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। মানুষ সচেতন হলে শুধু করোনাভাইরাস কেন, যে কোনো বড় সমস্যারও সমাধান সম্ভব।