সাইবার অপরাধ রোধে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের কারণে যেমন যোগাযোগ বেড়েছে, তেমনি নানা ধরনের সুবিধা পাচ্ছে মানুষ। কিন্তু একইসঙ্গে এমন বিষয় যখন সামনে আসছে যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককেন্দ্রিক অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে পালস্না দিয়ে বেড়ে চলেছে সাইবার অপরাধও; তখন বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ফেসবুক আইডি হ্যাকের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। এ ছাড়া ই-মেইল আইডি হ্যাক, ফেক আইডি তৈরি করে বস্ন্যাকমেইল করা, সেক্সটোরেশন, মোবাইল ব্যাংকিং জালিয়াতি ও অন্যান্য হ্যারাসমেন্টের শিকারও হচ্ছেন অনেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে গিয়ে অনেকেই শখের বশে হ্যাকিং শিখছে। সেটি ভালো কাজে না লাগিয়ে বস্ন্যাকমেইলিং করে অর্থ আদায়ের মতো অপরাধমূলক কর্মকান্ডেও অনেকে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা মনে করি, সার্বিকভাবে সাইবার অপরাধকেন্দ্রিক যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে তা ভয়ানক। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। উলেস্নখ্য, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে তাদের কাছে সরাসরি এক হাজার ৭৬৫টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। এ ছাড়া হ্যালো সিটি অ্যাপস, ফেসবুক, মেইল ও হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে অভিযোগ এসেছে ৬ হাজার ৩০০টি। ২০১৯ সালে সরাসরি অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৩২টিতে। আর হ্যালো সিটি অ্যাপস, ফেসবুক, মেইল ও হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে অভিযোগ এসেছিল ৯ হাজার ২২৭টি। এ ক্ষেত্রে এটাও উলেস্নখ্য যে, সাইবার ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে সাইবার ক্রাইমবিষয়ক বেশি অভিযোগ আসত নারীদের কাছ থেকে। কিন্তু এখন সমান্তরালভাবে পুরুষরাও সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। ২০১৯ সালে মোট অভিযোগের ৫৩ শতাংশ এসেছে পুরুষদের কাছ থেকে, আর বাকি ৪৭ শতাংশ এসেছে নারীদের কাছ থেকে। আমরা বলতে চাই, যখন এমন বিষয় উঠে আসছে যে, অপরাধের ধরন বদলাচ্ছে, তখন বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়বে, অপরাধের সংখ্যাও তত বাড়বে- এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। ফলে সাইবার ক্রিমিনালদের ব্যাপারে সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি। যেহেতু এমনটিও জানা গেছে যে, সাইবার ক্রাইমের শিকার হওয়া অনেকেই অসচেতনতার কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বস্ন্যাকমেইল বা হয়রানির শিকার হচ্ছেন- তখন সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করার বিকল্প নেই। জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিন কোটিরও বেশি। বেশিরভাগ লোকজনই ফেসবুকে নিজের আইডি খুললেও তা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন না। এ ছাড়া ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিজেদের খোলামেলা ছবি বন্ধু বা প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে আদান-প্রদান করে থাকেন। আর হ্যাকাররা সহজেই ওইসব আইডি হ্যাক করে খোলামেলা ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বস্ন্যাকমেইল করে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েসসাইট হ্যাক করেও অর্থ আদায় করে হ্যাকাররা। আমরা মনে করি, সাইবার অপরাধকেন্দ্রিক যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তা সন্দেহাতীতভাবেই ভয়ানক। এ ক্ষেত্রে সৃষ্ট পরিস্থিতি রোধে যেমন সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে তেমনিভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে হবে। প্রয়োজনীয় প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। এ ছাড়া মনে রাখা দরকার, সাইবার সূত্র বলছে, সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি- ফলে তরুণরা বিপথগামী হলে তা অত্যন্ত শঙ্কাজনক। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সাইবার অপরাধ রোধ হোক এমনটি কাম্য।