কফি আনানের প্রস্থান

আমরা শোকাহত

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মৃত্যু মানুষের স্বাভাবিক নিয়তি তবু তা অত্যন্ত বেদনার। আর কিছু কিছু মানুষ তাদের জীবন ও কমের্র মধ্য দিয়ে এমন কিছু রেখে যান, যা তাদের স্মরণীয় করে রাখে। কফি আনান ছিলেন এমনই একজন মানুষ। সম্প্রতি তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে, যা অত্যন্ত বেদনা এবং শোকের। জানা যায়, জাতিসংঘের সাবেক এই মহাসচিব সুইজারল্যান্ডে অবস্থানকালে শনিবার দিনের প্রথম ভাগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর এর কিছুক্ষণ পরই দেশটির বানর্ শহরের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও নোবেলজয়ী কফি আনানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আমাদের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া শোক জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ। কফি আনানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে জাতিসংঘ অভিবাসন সংস্থা এক টুইটারে লিখেছে, আজ এক মহান নেতা ও স্বপ্নদশীর্ মানুষকে হারিয়ে আমরা শোকাহত। উল্লেখ্য, কফি আনান আফ্রিকার দেশ ঘানায় জন্মেছিলেন ১৯৩৮ সালের ৮ এপ্রিল। তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান হিসেবে জাতিসংঘের মহাসচিব নিবাির্চত হন। ১৯৯৭ থেকে ২০০৬ সাল পযর্ন্ত পরপর দুই মেয়াদে তিনি সবোর্চ্চ এই সংগঠনের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। কফি আনান ম্যাকালেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অথর্নীতি’, গ্র্যাজুয়েট ইউনিভাসিির্ট জেনেভায় ‘আন্তজাির্তক সম্পকর্’ এবং এমআইটিতে ‘ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে অধ্যয়ন করেন। কফি আনান ছিলেন বৈশ্বিক ক‚টনীতিক ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আন্তজাির্তক একজন বিশেষজ্ঞ। যিনি জীবনভর আরও সুন্দর ও শান্তিপূণর্ বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য কাজ করে গেছেন। তার সহায়তা ও সমবেদনা পেয়েছে অনেক মানুষ। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি কাজ করে গেছেন নিঃস্বাথর্ভাবে। তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ যার ভেতরে সত্যিকারের দয়া, ভালোবাসা ও মেধা ছিল। বিশ্ব শান্তি রক্ষায় তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছে নোবেল কমিটি। এ ছাড়া আমলে নেয়া দরকার যে, তিনি এমন এক জীবনের অধিকারী ছিলেন, যিনি সবসময় মানুষের পাশে দঁাড়াতে চেয়েছেন। ২০০৬ সালে জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পরেও নিযাির্তত মানুষের পক্ষে কাজ করা বাদ দেননি। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় সংকটের সমাধানে তাকে জাতিসংঘের বিশেষ দূতের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সেখানে সংঘাতের শান্তিপূণর্ সমাধানে প্রচেষ্টা চালান। কফি আনান মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিয়েও কাজ করছিলেন। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জাতিগতভাবে সুরক্ষা এবং তাদের মানবেতর জীবনের অবসানে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়াসহ আনান কমিশনের ব্যানারে কফি আনান মিয়ানমার সরকারের কাছে ৮৮ দফা সুপারিশও করেছেন। তার সুপারিশ বাস্তবায়নে আন্তজাির্তকভাবে মিয়ানমার এখন চাপের মুখে। এ ছাড়া ২০১৬ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের ববর্রতার মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং বাংলাদেশে তাদের প্রবেশে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছিলেন কফি আনান। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নিউ ইয়কের্ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠক করেন কফি আনানের সঙ্গে। সেখানে ২০১৬ সাল থেকে রাখাইনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানবিক ভ‚মিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রশংসা করেন ড. আনান। বলার অপেক্ষা রাখে নাÑ মানুষের জন্য, বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এই মহান মানুষটির নিরলস প্রচেষ্টা বিদ্যমান ছিল আমৃত্যু। আমরা মনে করি, তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা কখনো ভুলে যাওয়ার নয়। এই মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত, তার বিদেহী আত্মার প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।