নির্বাচনী প্রচারণায় সংঘর্ষ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করুন

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীর দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তার সমর্থকরা ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন ইতিমধ্যে। আর সোমবার গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, নির্বাচনের প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে গত রোববার দুপুরে। রাজধানীর গোপীবাগে এ সংঘর্ষ হয় ১৮ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। খবরে বলা হয়েছে, বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিপক্ষের হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষের পর মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন নিজ বাসায় এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গণসংযোগ থেকে বাসায় ফেরার পথে তার ওপর হামলা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, কেবল ইটপাটকেল নয়, তাদের দিকে গুলিও ছোড়া হয়। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। প্রচারণায় সংঘর্ষের ঘটনায় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে রোববারের ঘটনার পর। সঙ্গত কারণেই বিষয়টি উদ্বেগের। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এটি বিশেষ এক মর্যাদার লড়াই। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলেই প্রার্থীই নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু প্রচারণায় সংঘর্ষের ঘটনা অত্যন্ত আতঙ্কের বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। প্রচারণায় যদি এমন সংঘর্ষ হয় তাহলে ভোটের দিনও যে সংঘর্ষ-রক্তপাত ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে- ভোটাররা এমন প্রশ্নও তুলেছেন। নাগরিকের ভোটাধিকার রক্ষা করতে হলে এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে আরও কঠোর হতে হবে বলেও তারা মনে করেন। অনস্বীকার্য যে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে মাঠপর্যায়ে লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ডও প্রস্তুত করা দরকার। এ ক্ষেত্রে ইসির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোরও কর্তব্য হওয়া দরকার কমিশনকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা। নির্বাচনে প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গসহ যে সব অভিযোগ করছেন, কমিশনকে তাও খতিয়ে দেখে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা ইসির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলেই মনে করা যায়। লক্ষণীয় যে, বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয়ার পর জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি বেশকিছু স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনের আয়োজন করেছে। কিন্তু কমিশনের আস্থার জায়গাটি এখনো শক্ত নয়। এ অবস্থায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তাদের আস্থা পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ তৈরি করেছে বলা যেতে পারে। ফলে কমিশন এ সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগাবে, এটাই মানুষ দেখতে চায়। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে ইসিকে। আমরা মনে করি, এজন্য তাদের ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। স্বস্তির বিষয়, বর্তমানে দেশে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। কোনো সুযোগসন্ধানী মহল যেন এ পরিবেশ নষ্ট করার সুযোগ না পায়- নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে এ পর্যন্ত কম রক্তপাত হয়নি, প্রাণহানির ঘটনাও কম নয়। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এহেন উদ্বেগ ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতি কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। বাঙালি উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোট দিতে আগ্রহী। সুতরাং তারা যেন নির্বিঘ্নে, ভয়হীন পরিবেশে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনীত করতে পারেন সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও সমর্থকদেরও কর্তব্য হওয়া দরকার নির্বাচনে সহিংসতার পথ সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে নির্বাচন কমিশনকে অবাধ নির্বাচনের কাজে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা। নির্বাচনে অনিয়ম, সংঘাত-সংঘর্ষ-রক্তপাতের মতো অহিতকর ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার একদিকে যেমন রাজনৈতিক দলগুলো, অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনও অস্বীকার করতে পারবে না। ফলে এখন থেকেই সব পক্ষকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন দৃষ্টান্ত হয়ে থাক- এটাই সবাই প্রত্যাশা করে।