৩৪৫০ মিটার দৃশ্যমান পদ্মা সেতু

যথাসময়ে কাজ শেষ হোক

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
স্বপ্নের পদ্মা সেতু আর স্বপ্নে নেই। নানা ধরনের কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে মুক্ত হয়ে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের চূড়ান্তে পৌঁছে যাচ্ছে- যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর ২৩তম স্প্যান '৬-এ' সেতুর ৩১ ও ৩২ নম্বর পিলারের উপর বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হয়েছে ৩ হাজার ৪৫০ মিটার (৩.৪৫ কিলোমিটার)। এ ক্ষেত্রে এটা উলেস্নখ্য যে, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সফলভাবেই স্প্যানটি বসানো সম্ভব হয়েছে। আর একের পর এক স্প্যান বসিয়ে এভাবেই স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে। অগ্রযাত্রার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের দিকে। এবারে ২২তম স্প্যান বসানোর ১০ দিনের মাথায় ২৩তম স্প্যানটি বসানো সম্ভব হলো। প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে আর ১৮টি স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে। তথ্য মতে, রোববার দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে স্প্যান বসানো শেষ হয়। এর আগে, সকাল ৯টায় ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটিকে মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার 'তিয়ান ই' ভাসমান ক্রেন বহন করে রওনা করে। প্রকৌশল সূত্রে জানা গেছে, ভাসমান ক্রেনটি নোঙর করে পজিশনিং করে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে স্প্যানটিকে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। বলা দরকার, পদ্মা সেতুতে বর্তমানে স্প্যান রয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে ২১টি স্প্যান পিলারের ওপর সংযুক্ত করা হয়েছে। আর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে আছে স্প্যান আছে ১৪টি। সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩৭ পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি পাঁচটি পিলারের কাজ শেষ হতে পারে এপ্রিল মাসের মধ্যে। আমরা বলতে চাই, ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে- এই বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, এর মধ্য দিয়ে প্রত্যাশিত স্বপ্ন আর স্বপ্নে আটকে থাকবে না। স্মরণ করা যেতে পারে, পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রাকযোগ্যতা যাচাই নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে অর্থায়ন স্থগিত করে। এরপর অনেকেরই আশঙ্কা ছিল পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন নিয়ে। কিন্তু সব আশঙ্কা দূর করে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। আর পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে ক্রমাগত। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বলার অপেক্ষা রাখে না, পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান '৭-এ' ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসে ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। এর পর ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে কাজ। আমরা চাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে এই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হোক যথাসময়েই। সর্বোপরি বলতে চাই, এ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ জানে, ফেরি পাড়ি দিয়ে পদ্মা পার হওয়া অস্বস্তিকর ও দীর্ঘ ভোগান্তির কাজ। এর মধ্যে যথেষ্ট বিড়ম্বনা ও ঝুঁকিও রয়েছে। ৭-৮ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টাও লেগে যায়। অনেক সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফেরি বন্ধ থাকে। আর এটা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে এই সেতু নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। আর একটা সময়ে পদ্মা সেতু নিয়ে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলেও আজ আর এই সেতু স্বপ্নে আটকে নেই- যা সামগ্রিকভাবেই ইতিবাচক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে যথা সময়ে সেতুর কাজ শেষ হোক এমনটি প্রত্যাশিত।