গ্রন্থমেলার উদ্বোধন

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বাস্তবায়ন ঘটুক

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শিল্প, কলা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছেন, 'আমাদের শিল্প, কলা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে আমরা আরও উন্নতমানের করে শুধু আমাদের দেশে না, বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের সাহিত্য আরও অনুবাদ হোক। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ আমাদের সাহিত্যকে জানুক, আমাদের সংস্কৃতিকে জানুক, সেটাই আমরা চাই।' এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমি যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই বইমেলা বা গ্রন্থমেলা এটা আমাদের প্রাণের মেলা। বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত 'আমার দেখা নয়া চীন' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, সিটি নির্বাচনের কারণে এ বছর ২ ফেব্রম্নয়ারি রোববার থেকে মেলা শুরু হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবছরও বইমেলায় বিভিন্ন প্রকাশনীর বইয়ের স্টল, লিটল ম্যাগ স্টল এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানেরও বেশকিছু স্টল আছে। বাংলা একাডেমির নিজস্ব স্টলেও থাকবে নতুন ও পুরনো প্রকাশনাগুলো। মেলার মূল মঞ্চে প্রতিদিনই থাকবে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট লেখক, সাহিত্যিক, গবেষক, চিন্তাবিদ ও কবিরা অংশ নেবেন। প্রতিবছর এই মেলাকে উপলক্ষ করে প্রকাশিত হয় কয়েক হাজার নতুন বই। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। নতুন প্রকাশনার গন্ধ মেখে আর পাতা উল্টিয়ে হাজার হাজার শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধ আবারও একুশের চেতনায় নিজেদের ঝালিয়ে নেবে, খুঁজে নেবে নিজেদের আত্মপরিচয়ের কথা, আত্মানুসন্ধানের সুদীর্ঘ কঠোর সংগ্রামের কথা, আর স্বকীয় শিল্পভাবনার নতুন অভিযাত্রার কথা। মেলায় নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে 'লেখক বলছি' মঞ্চ। এ মঞ্চে প্রতিদিনই নতুন-পুরাতন লেখকরা পাঠকের সঙ্গে নিজের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আড্ডা দেবেন। এবছর বাঙালি জাতি পালন করছে স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এবারের মেলা জাতির পিতাকে উৎসর্গ করা হয়েছে। আর এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১০০ গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে মেলা চলাকালীন সময়ে ২৬টি গ্রন্থ প্রকাশিত হবে। স্বীকার করতে হবে, দেশের হাজারো মেলার মধ্যে একুশে বইমেলার গুরুত্ব সর্বাধিক। এটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। সাহিত্যিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ধারার বিকাশও ঘটে মূলত এই মেলাকে কেন্দ্র করে। বাঙালির ভাষা, সাংস্কৃতিক বোধ ও ঐতিহ্য এই বইমেলার ভিত্তি। এটি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের স্মারক। ভাষা আন্দোলন, বাংলা একাডেমি আর একুশের বইমেলা মূলত একই সূত্রে গাঁথা। নবগঠিত বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক জাগরণের প্রথম প্রকাশ 'অমর একুশে বইমেলা'। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো- বইমেলা উপলক্ষে প্রতিবছর যথাযথ সম্পাদনাহীন এবং মানহীন অযত্ন প্রকাশনায় বইমেলা সয়লাব হয়ে পড়ে। এসব বইপত্র চিন্তা ও সৃজনশীলতা বিকাশের পথ রুদ্ধ করে। তাই, কেবল প্রকাশের উলস্নাসে না মেতে এই বিষয়গুলোর প্রতি সংশ্লিষ্ট সবার নজর দেয়া কর্তব্য। উলেস্নখ্য, একুশে বইমেলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের মতোই প্রাচীন। যতদূর জানা যায়, ১৯৭২ সালেই বাংলা একাডেমি চত্বরে ব্যক্তি উদ্যোগে ৩২টি বই নিয়ে অতিক্ষুদ্র এক মেলা বসেছিল। ১৯৭৬ সালে কয়েকটি প্রকাশনী সংস্থাসহ বাংলা একাডেমিও এই বইমেলার সরঙ্গ যুক্ত হয়। আর ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমি এককভাবেই 'অমর একুশে বইমেলা' শুরু করে। ১৯৯০'র দশকেই বইমেলা হয়ে ওঠে আমাদের জাতীয় সৃজনপ্রক্রিয়ার হৃদযন্ত্র। পর্যায়ক্রমে বইমেলার পরিধি বেড়েছে। ২০১৪ সাল থেকে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে সম্প্রসারিত হয়েছে। এবছর উদ্যানের মেলায় যুক্ত হয়েছে লিটল ম্যাগ। মেলায় চালু করা হয়েছে শিশুপ্রহর, শিশুদের বইয়ের জন্য আলাদা চত্বর। সর্বোপরি বলতে চাই, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশের শিল্প, কলা, সাহিত্য, সংস্কৃতি বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার যে ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তা বাস্তবায়নে বাংলা একাডেমিসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে হবে।