নৈতিকতাবিহীন জ্ঞানাজর্ন নিরথর্ক

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আমাদের সমাজে আজ শিক্ষিতের ছড়াছড়ি। যেদিকে চোখ যায় ভুরিভুরি ডিগ্রিধারী। বড়বড় মোটামোটা ডিগ্রি, দেশি বিদেশি ডিগ্রি, হরেক রকমের ডিগ্রি আছে। পাসোর্নাল কাডের্ ডিগ্রির দাপটে আসল নামটাই খুঁজে পাওয়া যায় না। কখনো কখনো নামটিও এমন হয় যে, এটা নাম নাকি ডিগ্রি সেটিও চিহ্নিত করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। এই ডিগ্রিধারীরা আমাদের সমাজ, আমলাতন্ত্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের রন্ধ্রেরন্ধ্রে অবস্থান করছেন এবং তাদের দুনীির্তজ্ঞান প্রয়োগ করে দক্ষতার সাথে দেশকে অধপতনের চরম শিকড়ে নামিয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর আজ পঙ্গু। যেখান থেকে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব জমা হওয়ার কথা ছিল, সেখানে প্রতি বছর সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা ভতুির্ক দিতে হচ্ছে। হলমাকর্ কেলেঙ্কারিসহ শতশত কেলেঙ্কারিতে কলুষিত এই সেক্টর। সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো হয় ঋণখেলাপি নাটক কিংবা নয়ছয়ের মতো হাস্যকর হিসাব নিকাশ। বছরের পর বছর এই অনিয়ম অব্যাহত। যারা এই সেক্টরের দায়িত্বে¡ আছেন তারা অত্যুচ্চ শিক্ষিত, দেশের গন্য মান্য জঘন্য ব্যক্তিত্ব। পরিবহন সেক্টরে দুনীির্তর দীঘর্ ফিরিস্তি উঠে এসেছে সাম্প্র্রতিক ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পর। বিআরটিএ কে দুনীির্তর কারখানায় পরিবতর্ন করা হয়েছে। টাকা দিলেই লাইসেন্স কিংবা ফিটনেস সব ঠিক হয়ে যায়। দেশে ১৬ লাখ গাড়ি লাইসেন্সবিহীন, ঢাকা শহরের গাড়িগুলো সব লক্কড়ঝক্কড়, নেই সুনিদির্ষ্ট ভাড়া, যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা করানো, ঘুষ ইত্যাদি অপরাধ আজ রীতিনীতিতে পরিণত হয়েছে। এই সেক্টরেও বসে নেই কোনো অশিক্ষত গÐমূখর্ বরং তাহারা উচ্চ শিক্ষিত। স¤প্রতি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে এক লাখ চুয়াল্লিশ হাজার টন কয়লা উধাও হওয়ার পর ঘুমন্ত পেট্রোবাংলার টনক নড়েছে। দুদক শীষর্স্থানীয় পঁাচজন এমডিকে তলব করেছে, ১৯ জন কমর্কতার্র বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিত্ব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন কিছু শিক্ষক রয়েছে, যারা শিক্ষাথীের্ক অসদুপায় অবলম্বন করতে উৎসাহ দেন, এমনকি প্রশ্ন ফঁাসের সঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকেন। অনেক শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য খুলে বিরাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনীতিবিদরা রাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রতাপশালী গোষ্ঠী। নিবার্চনের প্রাক্কালে তাদের দেখা পাওয়া যায়। নিবার্চনে জয়ী হওয়ার পর থেকে উধাও। তারা সবাই চলে আসেন রাজধানী শহরে, বাস করেন আলীশান বাড়িতে। যদিও গত নিবার্চনে তাদের জনগণের কাছে কষ্ঠ করে যেতে হয়নি। যার ফলে তারা আর একটু নিশ্চিন্ত যে জনগণের সমথর্ন ছাড়াও ক্ষমতা অঁাকড়ে রাখা যায়। উপরোল্লিখিত চিত্রসমূহ বিভিন্ন সেক্টরে বিরাজমান সমস্যাবলির নিত্যদিনের চিত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ হবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূণর্, শিল্পোন্নত সোনার বাংলা। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বাঙালি জাতিকে অনিশ্চয়তার অথৈ সমুদ্রে ভাসিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পাড়ি জমাতে হয়েছিল মহাকালের পথে। বঙ্গবন্ধু প্রশাসনকে অকাযর্কর করার জন্য সবোর্চ্চ ভ‚মিকা রেখেছিল তৎকালীন দুনীির্তপরায়ণ আমলাতন্ত্র এবং নৈতকতাহীন রাজনীতিবিদরা। আজও আমাদের সমাজে এই দুটি দলের ভ‚মিকায় কোনো পরিবতর্ন আসেনি। পরিবহন সেক্টর, ব্যাংক সেক্টর, খনিজ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইত্যাদিতে ঘাপটি মেড়ে আছে অসাধু চক্র এবং পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে দুনীির্তপরায়ণ রাজনীতিবিদরা। তবে আশার কথা হলো প্রধানমন্ত্রী স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ট্রাফিক আইন সংযোজনের নিদের্শনা দিয়েছেন, যাতে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এই শিক্ষাথীর্রা ট্রাফিক আইন সম্পকের্ সচেতন হয়ে গড়ে উঠতে পারে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবেদন করতে চাই, যাতে প্রাইমারি এবং মাধ্যমিক পযাের্য় শিক্ষাথীর্রা নৈতিকতা অজর্ন করতে পারে সেভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়। জাপান কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নৈতিকতা শিক্ষার প্রতি সবাির্ধক গুরুত্বারোপ করে। আমরাও যেন আমাদের পরবতীর্ প্রজন্মকে সৎ, ন্যায়বান একজন যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। যাদের মাধ্যমে দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এবং ত্রিশলাখ শহীদের স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। সেই প্রত্যাশা করি। মো. মাহবুবুর রহমান সাজিদ শিক্ষাথীর্ : এস এম হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়