ক্যানসার বৃদ্ধির আশঙ্কা

ডবিস্নউএইচওর সতর্কবার্তা আমলে নিন

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ২০৪০ সালের মধ্যে প্রাণঘাতী ক্যানসারের প্রকোপ ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা ডবিস্নউএইচও (হু)। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে আতঙ্কজনক এই তথ্য। তথ্য মতে, এমনিতেই নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ক্যানসারে মৃতু্যহার সর্বোচ্চ। আর প্রতিরোধ এবং চিকিৎসাসেবায় বিনিয়োগের অভাবেই এই রোগ নিরাময় প্রায় অসম্ভব মনে করেন স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা। সঙ্গত কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই প্রতিবেদন আমাদের জন্য অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। পাশাপাশি ধনী এবং দরিদ্র দেশগুলোতে ক্যানসারের সেবায় মেনে না নেয়ার মতো এই বৈষম্য আমাদের জেগে ওঠার জন্যও এক আহ্বান বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। . গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০ শতাংশ মৃতু্যর জন্য তামাককে দায়ী করা হয়। উচ্চ-আয়ের দেশগুলোতে উন্নত ক্যানসার চিকিৎসার ফলে ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রাণহানি ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। বিপরীতে দরিদ্র দেশগুলোতে এই হার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ক্যানসার আক্রান্তের ঘটনা মোটাদাগে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। বাস্তবতা হলো ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। ফলে এ রোগের সমানভাবে চিকিৎসাসেবা পাওয়ার বিষয়টিও আমলে নেওয়ার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্যানসারকে বিশ্বের ধনী দেশগুলোর রোগ হিসেবে এতদিন বিবেচনা করা হলেও এখন আর সেই অবস্থানে নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, আগামী দিনে বিশ্বে প্রত্যেক পাঁচজনের একজনকে ক্যানসার নির্ণয়ের মুখোমুখি হতে হবে। এটা বিশ্বের জন্য এক ধরনের বোঝা। বিশ্ব ক্যানসার দিবসে ডবিস্নউএইচও প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দশকে আড়াই হাজার কোটি ডলার (২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগই কেবল ক্যানসারের ছোবল থেকে ৭০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। সংক্রামক ব্যাধি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান বলেছেন, ক্যানসারের নিয়ন্ত্রণ ব্যয়বহুল হওয়া ঠিক হবে না। প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরিবর্তে অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধি ও মাতৃ এবং শিশু স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য তাদের সীমিত সম্পদ ব্যয়ে মনোনিবেশ করেছে। কিন্তু ক্যান্সোর চিকিৎসায় এসব দেশের সক্ষমতা নেই। বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রাথমিক সেবা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানুষের সহজ প্রবেশাধিকার থাকলে প্রাণঘাতী ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত, কার্যকর চিকিৎসা এবং নিরাময় করা যেতে পারে। উলেস্নখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী বাড়ছে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা। দেশে প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং মারা যান ৯১ হাজার ৩০০ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগেও বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে বছরে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ মারা যাবেন। আর গবেষকরা বলেছেন, পৃথিবীতে অন্তত ২০০ ধরনের ক্যানসার রয়েছে। এর মধ্যে স্তন ক্যানসার ও প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হওয়ার হারও অনেক বেশি। ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে এতে মারা যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। গবেষকরা নতুন নতুন ক্যানসার যেমন শনাক্ত করছেন, আবার চিকিৎসার নতুন দিগন্তও উন্মোচন করছেন; যা বেঁচে থাকার আশা জাগাচ্ছে ক্যানসার আক্রান্তদের। গত বছর আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি রিসার্চ অন ক্যানসার (আইএআরসি) এক জরিপে বাংলাদেশে ক্যন্সার চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার বিষয়টিও উঠে এসেছিল। এটা ঠিক যে, সরকার ক্যানসার চিকিৎসার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয় সহজলভ্য করার বিষয়েও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। কেননা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিশ্বের কোথাও কারও জন্য ক্যানসার মৃতু্যর সাজা হতে পারে না। সর্বোপরি মনে করি, ২০৪০ সালের মধ্যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৮১ শতাংশ ক্যানসার বৃদ্ধি পাওয়ার এই সতর্কবার্তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে আমলে নিতে হবে। ক্যানসার আক্রান্তের কারণ শনাক্ত করে তা নিরসনেরও বিকল্প থাকা উচিত নয়। প্রত্যাশা থাকবে, সরকার তথা দেশের নীতিনির্ধারকরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করবেন। জাতিসংঘকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। ক্যানসার নিরাময়ে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে সবাইকে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে ক্যানসারমুক্ত বিশ্ব গড়ে উঠুক- এটাই প্রত্যাশা।