বস্তিতে আগুন

কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশে যেন অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বস্তি ও বিভিন্ন কারখানা থেকে শুরু করে নানাভাবেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে এ সব ঘটনার ভয়াবহতা অনুধাবন করে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চট্টগ্রামে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে তিনটি অগ্নিকান্ডে পুড়েছে ছয়টি বস্তি। এক বছর আগে ভেড়ামারা বস্তিতে এমনই এক অগ্নিকান্ডে পুড়েছিল ৯টি তাজা প্রাণ। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া সমীচীন, প্রতিটি অগ্নিকান্ডের পরই অভিযোগ উঠছে এসব বস্তিতে আগুন দেওয়ার নেপথ্য নিয়ে। তবে ফায়ার সার্ভিস কিংবা পুলিশ-কারো কাছেই এর কোনো জবাব নেই। এসব ঘটনা তদন্তে প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিকতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন- এমন বিষয় পত্রিকায় এসেছে। উলেস্নখ্য, সোমবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট থানার মাদারবাড়ী এলাকায় আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে চারটি বস্তি। সেগুলো হলো- কাঁচারি লেইন বস্তি, এসআরবি বড় মাঠ বস্তি, এসআরবি ছোট মাঠ বস্তি ও রেললাইন বস্তি। জানা যায়, পুড়ে যাওয়া চারটি বস্তি পরস্পর লাগোয়া। আগুনের সূত্রপাত হয় পশ্চিম পাশে চলাচলের রাস্তা লাগোয়া একটি খালিঘর থেকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সোমবার ভোরের রহস্যময় আগুনে তাদের বাসাবাড়ির সঙ্গে পুড়ে গেছে নগদ টাকা, গহনা, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই থেকে শুরু করে বিদেশগামীর পাসপোর্ট-ভিসাও। তাদের অভিযোগ, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ বস্তিতে আগুন দিয়ে তাদের স্বপ্ন পুড়ে ছাই করে দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, বস্তিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটতে থাকবে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রসঙ্গত, আমরা এটাও বলতে চাই, শুধু চট্টগ্রামেই নয়, রাজধানী ঢাকাতেও একের পর এক বস্তিতে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানেই নানাভাবেই অগ্ন্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে- যা অত্যন্ত উদ্বেগের। এর আগে এমনও উঠে এসেছে যে, গত বছর দেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ২২ হাজার ২৮৩টি। ২০১৮ সালের তুলনায় যা প্রায় তিন হাজার বেশি। এ ছাড়া তখন এমন তথ্যও সামনে এসেছিল গত বছরের অগ্নিকান্ডে প্রাণহানি ঘটেছে ১৮৬ জনের। অগ্নিকান্ডগুলোর বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩৯ ভাগ ক্ষেত্রেই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বৈদু্যতিক ত্রম্নটি থেকে। অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে রেহাই পায়নি বস্তি থেকে শুরু করে কেমিক্যাল গোডাউন কিংবা আধুনিক বহুতল ভবনও। সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া দরকার, বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে ঘটে যাওয়া বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ ও সতর্ক না হওয়ায় অগ্নিদুর্ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে বামরা মনে করি, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। উলেস্নখ করা প্রয়োজন, নয় বছর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন ঢাকার নিমতলীর অগ্নিকান্ডে ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। ওই ঘটনা তদন্ত করে ১৭ দফা সুপারিশ পেশ করেছিল তদন্ত কমিটি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সুপারিশগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তা ছাড়া ভুলে যাওয়া যাবে না যে, যাত্রাবাড়ীর কেমিক্যাল কারখানা, মিরপুর বস্তি, আশুলিয়া তাজরিন ফ্যাশন, টঙ্গির ফয়েল কারখানাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বোপরি বলতে চাই, বারবার অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা বা এ ধরনের বীভৎস পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতা বিবেচনা সাপেক্ষে, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখুক এমনটি কাম্য।