বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী অঙ্গীকার হোক সেবা ও মানবতার

'শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় সর্বত্র আমরা' বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি বাহিনীর মূলমন্ত্র। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাহিনীর কর্মকর্তা থেকে সদস্য পর্যন্ত সবার ব্যাপক দক্ষতা অর্জন অত্যন্ত জরুরি। আর এ দক্ষতা অর্জনের মূল চাবিকাঠি হলো 'প্রশিক্ষণ'। মানুষের দক্ষতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমেই প্রসারিত হয়।

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
১৯৪৮ সালের ১২ ফেব্রম্নয়ারি আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর ১২ ফেব্রম্নয়ারি আনসার ভিডিপি বাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়ে থাকে। চলতি বছর আগামী ১৩ ফেব্রম্নয়ারি, ২০২০ খ্রি. তারিখে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আনসার ভিডিপি একাডেমি, সফিপুর, গাজীপুরে উদযাপন করা হবে। ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাহিনীর মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত পৃষ্ঠপোষকতা, সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকান্ড পূর্বের তুলনায় বেশি বেগবান হয়েছে এবং সাফল্যের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ এক সাফল্যজনক উন্নয়নধারা অতিক্রম করছে। এ কর্মধারার মূলভিত্তি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিবাচক অর্জনসমূহ। আজ সব উন্নয়ন কর্মকান্ডের বাহন দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী। দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা সবচেয়ে বড় দু'টি চ্যালেঞ্জ। সব অর্থনৈতিক কর্মক্ষেত্রের দক্ষ চালিকাশক্তি হিসেবে দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষেত্রে প্রস্তুত করাই এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ও চ্যালেঞ্জ। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রকৃত যাত্রাপথই হচ্ছে তারুণ্যকে সচেতন এবং দক্ষতায় অভিষিক্ত করা। মানুষ মূলত শান্তিকামী। সবার জন্য একটি নিরাপদ এবং মানসম্মত শান্তিময় জীবন অর্জনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে আনসার ভিডিপি বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। আজকের বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি আর ৫০ বছর পূর্বেকার আনসার এক কথা নয়। অবশ্য ৭০-এর দশকে আনসারের সঙ্গে গ্রাম প্রতিরক্ষা দল সংক্ষেপে ভিডিপি সংযোজন করে বাহিনীর পথ ও পরিক্রমাকে আরও সাবলীল ও প্রশস্ততর করা হয়। অনেকের কাছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি বিস্ময়। বিস্ময় এই অর্থে যে, এ বাহিনীর ৬১ লাখ সদস্য-সদস্যার যার অর্ধেক পুরুষ ও অর্ধেক মহিলা। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, ৬১ লাখ সদস্য-সদস্যাগণের অধিকাংশ নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে থাকেন। শুধুমাত্র সরকারি সুবিধার আওতায় বিনা খরচে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন। প্রশিক্ষিত আনসার ভিডিপি সদস্য-সদস্যাগণ সরকারি নির্দেশে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন, রেললাইন ও মহাসড়ক রক্ষা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কেপিআই (জাতীয় সংসদ, পদ্মা সেতু, বিমানবন্দর, নৌবন্দর, বিটিভি, বেতার কেন্দ্র) এবং জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলাসহ নানাবিধ জনগুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে সরকারি নির্দেশে নিয়োজিত হয়ে থাকেন। আমি বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে কাছে থেকে এই বাহিনীকে দেখেছি, বুঝেছি, জেনেছি এবং অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। বাংলাদেশ আনসার বাহিনীর ইতিহাসে অনেক চড়াই-উতরাই আছে। অনেক ত্যাগ ও সহিঞ্চুতার উদাহরণও আছে এ বাহিনীর অনেকেরই। তাদের কেউবা বেঁচে আছেন, অনেকেই বেঁচে নেই। তাদের মধ্যে শ্রদ্ধেয় পরিচালক শরিফুল হক সাহেবের কথা না বলেই পারছি না। যিনি ছিলেন প্রাক্তন সেনা প্রধানের পিতা। মেহেরপুরের মেহের আলী ও আনসার কমান্ডার অস্থির মলিস্নক যারা মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অস্থায়ী মুজিবনগর সরকার প্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদান করে আনসার বাহিনীকে গৌরবান্বিত করেছেন এবং প্রতিবছর মুজিবনগর দিবসে 'গার্ড অব অনার' প্রদানের দায়িত্ব প্রাপ্তি আনসার ভিডিপি বাহিনীর জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক অর্জন। আমি কোনো ইতিহাস লিখতে বসিনি। তবে ঐতিহাসিক পটভূমি, মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান, সামাজিক অনেক প্রেক্ষাপট নিয়েই আছে বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি। এ বাহিনীর প্রধান মহাপরিচালকের সঠিক দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্বে আনসার ভিডিপি'র ৬১ লাখ সদস্য-সদস্যাগণ বাহিনীর মূলমন্ত্র "শান্তি, শৃংখলা, উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় সর্বত্র আমরা"- এই ব্রতকে ধারণ করে সর্বদা উজ্জীবিত থাকেন। যারা জানেন বাস্তবিক অর্থেই আনসার ভিডিপি একটি বিস্ময়ের নাম। বাংলাদেশে একমাত্র আনসার বাহিনীর আছে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত সুবিশাল প্রশিক্ষিত সদস্য-সদস্যা। নামেই শুধু তার পরিচয় নয়। কাজে কর্মে কোনো অংশেই তারা পিঁছিয়ে নেই। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৪০ হাজার অস্ত্র নিয়ে এ বাহিনীর প্রশিক্ষিত আনসাররা পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং ভারতের মাটিতে আশ্রয় কেন্দ্রে বিভিন্ন ত্রাণ সেবাসহ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পসমূহে রণাঙ্গনে শত্রম্নর মোকাবিলা করার জন্য ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সংগঠন গড়ে তোলে। বাংলাদেশ আনসার বাহিনী থেকে প্রত্যাশী সংস্থা বা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অতি সহজে যে নিরাপত্তার সেবা পেয়ে থাকে পৃথিবীর অন্য কোথাও তার নজির নেই। আজকের যুগে এ আমাদের জন্য দুঃখ ও লজ্জার বিষয় যে, ঐতিহ্যবাহী আনসারের জন্মভূমি সৌদি আরবে আমাদের নারী শ্রমিকরা সস্তায় শ্রম দিয়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত হচ্ছে- যা চরম অবিচার ও শ্রম আইনের অধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে বিবেচিত হয়। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য যে, বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি বাহিনীর প্রচুর ড্রাইভার, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক, গার্মেন্টস কর্মী, বিভিন্ন পেশাভিত্তিক ও কারিগরি ভোকেশনাল ট্রেডে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে থাকে- যাদের একটা অংশ প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক হিসেবে পরিচিত। এবার আমি আনসার বাহিনীতে তুলনামূলক তারতম্যমূলক চিত্র তুলে ধরতে চাই। পূর্বে বাংলাদেশ আনসার সংগঠন ছিল পুরোপুরি এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এখন আর পুরোপুরি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বলা যাবে না। এই সরকারের আমলে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এক অভূতপূর্ব উন্নতি সাধনসহ অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকতাও লাভ করেছে। ব্যাটালিয়ন আনসার তার নিয়মিত অপারেশনাল বাহিনী। আগে কোনো আইন ছিল না। পুলিশ বাহিনীর একটা রুলের ওপর ভিত্তি করে আনসারের কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। বর্তমানে আনসার বাহিনী আইন-১৯৯৫ দ্বারা এ বাহিনীর পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার বাহিনীর আইনকে যুগোপযোগী করতে 'ব্যাটালিয়ন আনসার-২০১৯ নামে আইন প্রণয়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে- যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন আছে। বাহিনীর কমান্ড পর্যায়ে বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা অবস্থান করছে। বাহিনীর আরও ব্যাপক সংস্কার ও পরিবর্তন আবশ্যক। বাহিনীর উপরে অনেক কাজের দায়িত্ব আছে বটে কিন্তু একক ও সুনির্দিষ্ট কোনো কার্যক্রমে বাহিনীকে সম্পৃক্ত করে বাহিনীকে ক্ষমতায়ন ও শক্তিশালী সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই বাহিনীর একটি সুদৃঢ় ভিত তৈরি করা যেতে পারে। হয়তো একদিন এ বাহিনী পূর্ণাঙ্গভাবে সক্ষমতা অর্জন করে ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাগণ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আনসার বাহিনী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর অংশ- যা সাংবিধানিকও বটে। সুশৃঙ্খল একটি বাহিনী হিসেবে এ বাহিনী ১৯৯৭ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক সম্মানজনক জাতীয় পতাকা লাভ করে। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে এ বাহিনীর রয়েছে অনেক সম্মান ও সুনাম। ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আনসার ভিডিপি বাহিনী রাষ্ট্রীয় সম্মান 'একুশে পদক' লাভ করে। এ সবই সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য। তার আন্তরিকতা ও সদিচ্ছায় বাহিনীর ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা আজ অন্যান্য বাহিনীর ন্যায় নিয়মিত বাহিনী হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। যারা পূর্বে ছিল অঙ্গীভূত। বিসিএস আনসার কর্মকর্তারা তাদের কমান্ড পর্যায়ে অফিসার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া এ সরকারের আমলে বাহিনীর অর্গানোগ্রামের জায়গায়ও পদ-পদবি পরিবর্তন আনয়ন করে তাদের মনোবলের জায়গাটি সুদৃঢ় করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় ক্যাডার সার্ভিসের একটি পদকে ২য় গ্রেড করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিডিজি ও ডাইরেক্টর পদ আপগ্রেডসহ অনেক পদ সৃজন করা হয়েছে। ঋ.জ, ঝ.জ ও নিয়োগবিধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ও সম্পূরক অনেক কিছুই অদূর ভবিষ্যতে পরিবর্তন হবে। অদূর ভবিষ্যতে আরও অনেক পরিবর্তনের প্রত্যাশী আমরা। তবে উলেস্নখ্য যে, অন্যান্য বাহিনীর বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে এ বাহিনীর সুযোগ-সুবিধার সমতাকরণ আবশ্যক। বেতনস্কেলের দিক থেকে ব্যাটালিয়ন আনসার ও অন্যান্য বাহিনীর বেতনস্কেল ও ছুটির সুবিধা সমান নয়। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধামন্ত্রীকে এ বিষয়াদি অবহিত করা হয়েছে এবং অন্যান্য বাহিনীর ন্যায় ব্যাটালিয়ন আনসারদের বেতনস্কেল সমন্বয়ের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়াও বিগত জাতীয় সমাবেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস প্রদান সত্ত্বেও ব্যাটালিয়ন আনসারদের দুই মাস ছুটির প্রস্তাব মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিবেচনাযোগ্য নয় মর্মে ফেরত এসেছে। এই বিষয়টি সুরাহাকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করা যাচ্ছে। আনসার ভিডিপি বাহিনীর ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতিসংঘ মিশনসহ এ বাহিনীকে সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব অর্পণের মাধ্যমে ক্ষমতায়নকরণ বা ইতিবাচক কোনো সুখবর পাওয়া যাবে। এ যাবত আনসার বাহিনীর যত প্রাপ্তি ও অর্জন তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক হস্তক্ষেপে তা সম্ভব হয়েছে। নয়তো আনসার সদস্যরা আরও বৈষম্যের শিকার হতো। উলেস্নখ্য, পোশাক নবায়ন ভাতা ও রেশন প্রাপ্যতার ক্ষেত্রেও তারতম্য আছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ১৯৯৪ সালে সংগঠিত আনসার বিদ্রোহ প্রকৃত অর্থে কোনো আনসার বিদ্রোহ ছিল না। তাকে আনসার অসন্তোষ বলাই সমীচীন। কেননা, সে সময়ে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আনসার বাহিনীর বেতন, রেশন ও কল্যাণমূলক ক্ষেত্রে যে বৈষম্য ছিল তা দূরীকরণের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বিভাগীয় ব্যবস্থায় ২৫০০ আনসার সদস্যকে চাকরিচু্যত করা হয়। ওই সময়ে ১০০-১৫০ জন সদস্য টাঙ্গাইল মহাসড়ক ব্যারিকেড দেয় অথচ তার দায় নিতে হয় নিরপরাধ ২৫০০ সদস্যকে। কে রাখে তাদের খবর? তারা অনেকেই আজ চাকরি হারিয়ে পথে বসেছে, সংসার ভেঙেছে, সংসার বিসর্জন দিয়ে কেউ কেউ আত্মাহুতিও দিয়েছেন, কেউবা দিনমজুর ও রিকশাচালক হিসেবে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করেছেন। অবাক হওয়ার বিষয় এই যে, কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে বাধ্য হয়েছিলেন। কেউ কেউ বলে থাকেন এই কি মানবতা, এই কি বিচার? কেউ কেউ বলে থাকেন বিগত সরকার প্রধানের নামে মানহানি ও প্রতিকার মামলা চাওয়া উচিত ছিল। এরকমটা হলে হয়তো ঈড়সঢ়বহংধঃরড়হ দিয়ে মানবতার অপমান ঘুচানো যেত। নিরপরাধ শান্তিপ্রিয় নিরীহ আনসারদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অপারেশনের যৌক্তিকতা ছিল না। আনসাররা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল মর্মে দোষারোপ করা হয়। আদতে অস্ত্রাগার ছিল সংরক্ষিত, ভেতরে ব্যারাকে ছেলেমেয়েদের অবস্থান ছিল পূর্ণ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সহিত। বিদ্রোহে মানহানি, সম্মানহানি, অশ্লীলতা ও অনেক কিছুই হওয়ার থাকে কিন্তু আনসার বিদ্রোহে সেরকম কিছুই ঘটেনি। তবে এটাকে বড় করে ফলাও করা হয়েছিল বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে। যাই হোক, সে সময়ের নীতিনির্ধারকরা কতটা সচেতন হলে এহেন কোনো দুর্ঘটনা ঘটতো না। অন্ততঃপক্ষে রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনীকে প্রতিপক্ষ হিসেবে মোকাবিলা করা নেহায়েত বোকামি ছাড়া আর কিছু না। আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উলেস্নখ করা আবশ্যক যে, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেদিন আনসারদের সঙ্গে সহানুভূতি ব্যক্ত করেছিলেন এবং তিনি সে সময়ে বিরোধীদলীয় প্রধান হিসেবে মিডিয়াতে আনসারদের এই ভোগান্তির অবসানে তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবির পক্ষে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন- যা পত্রপত্রিকায় বিবৃতি আকারে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। আরো উলেস্নখ্য যে, বর্তমান সরকারের আমলে তখনকার চাকরিচু্যত ২৫০০ ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য অনেকেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও প্রত্যাশী সংস্থায় অঙ্গীভূত হয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। 'শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় সর্বত্র আমরা' বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি বাহিনীর মূলমন্ত্র। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাহিনীর কর্মকর্তা থেকে সদস্য পর্যন্ত সবার ব্যাপক দক্ষতা অর্জন অত্যন্ত জরুরি। আর এ দক্ষতা অর্জনের মূল চাবিকাঠি হলো 'প্রশিক্ষণ'। মানুষের দক্ষতা, সততা ও কর্মনিষ্ঠা উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমেই প্রসারিত হয়। হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে আনসার ভিডিপি বাহিনীর ৬১ লাখ সদস্য-সদস্যাদের জীবন মান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নকল্পে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি বাহিনী বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এ বাহিনী কর্তৃক সারা বছরব্যাপী নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৬৪টি জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক বেকার তরুণ যুবক-যুবতীদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতসহ বিভিন্ন ট্রেডে কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে- যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এমনকি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের স্বল্প সুদে বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাংক ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা নিজেদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এ বিশাল জনগোষ্ঠী নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান সহযোগী। বাহিনীর মূলমন্ত্রকে ধারণ করে সেবা ও সহযোগিতার সঠিক ক্ষেত্র চিহ্নিতপূর্বক দক্ষতা, উন্নয়ন ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হোক আনসার বাহিনীর আগামী দিনের পাথেয়। আমরা আস্থার সঙ্গে বলতে পারি যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে ও সমাজ বিকাশের সাবলীল ধারায় আগামী দিনে এ বাহিনীর কর্মীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জাতির কল্যাণে যে কোনো সংকট মহূর্তে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবেন। অধিকন্ত মুজিববর্ষ-২০২০ এ বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অঙ্গীকার হোক সেবা ও মানবতার। ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ: সাবেক ডিডিজি, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক