বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ বিদেশিরা টাকা পাচার করছেন কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে এসে বছরে মোটা অংকের টাকা নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশিরা। বেতনের নামে তারা বছরে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা অর্থ গ্রহণ করে পাচার করছেন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা। এই অর্থ পদ্মা সেতুর মোট ব্যয়ের প্রায় সমান। এর ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসা অত্যন্ত উদ্বেগের বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের ২১ খাতে ৪৪ দেশের ২ লাখ ৫০ হাজার বিদেশি নাগরিক কাজ করছেন। এর মধ্যে কর দিচ্ছেন ৯ হাজার ৫০০ জন। বাকি ২ লাখ ৪১ হাজার অবৈধ। এরাই বেতনের নামে বাংলাদেশ থেকে বছরে ওই অর্থ পাচার করছেন। বুধবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি সংশ্লিষ্টরা এটি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিদেশিদের বৈধ অনুমোদন দেয়ার আগে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা এবং অবৈধদের বিরুদ্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার যে বিষয়টি বিশ্লেষকরা সামনে এনেছেন তা অত্যন্ত সঙ্গত। এর আগেও অবৈধ বিদেশিদের নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছিল। অবৈধভাবে এসে কাজ করবে, এটি বিশ্বের কোনো দেশই এখন মেনে নেয় না। সম্প্রতি এর প্রমাণও মিলেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি শ্রমিক অবৈধ হয়ে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে। ফলে বাংলাদেশও অবৈধ শ্রমিকের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

প্রথমত, দেশ থেকে যে উপায়েই অর্থ পাচার হোক না কেন তা দেশের অর্থনীতির বড় ধরনের ক্ষতি। আর অনুমতি ছাড়া কাজ করার মানে হলো, তারা যে পরিমাণ অর্থ নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে, তার পুরোটাই অবৈধ। দ্বিতীয়ত, বিষয়টি হলো দেশের নিরাপত্তা। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা উলেস্নখ করেছেন, এসব অবৈধ বিদেশি জঙ্গি হামলাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিদেশে পাচার করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে মোট ২১ খাতে ৪৪ দেশের শ্রমিক বাংলাদেশে কাজ করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ভারতের। সরকারি হিসেবে দেশটির ৩০ হাজারের বেশি নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করেন। এরপর চীন, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, নরওয়ে এবং নাইজেরিয়া উলেস্নখযোগ্য। এসব বিদেশি নাগরিকদের নূ্যনতম মাসিক বেতন ১ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। আর বিদেশি কর্মীদের মোট বার্ষিক আয় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে দেশে নিয়ে যায় ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুসারে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৫০০। আলোচ্য সময়ে তাদের মোট আয় ছিল ৬০৩ কোটি টাকা। আর এখান থেকে সরকারকে কর দিয়েছে ১৮১ কোটি টাকা। তবে টিআইবি বলছে, এটি সঠিক তথ্য নয়। এখানেও আয়কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে। কারণ এই তথ্য অনুসারে প্রতিজন বিদেশি কর্মীর মাসিক আয় ৫৩ হাজার টাকা। যা একেবারে অসম্ভব। কেননা, এই পরিমাণ বেতনের জন্য কেউ বাংলাদেশে আসে না। বিদেশি শ্রমিকরা তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, বায়িং হাউস, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিদু্যৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মোবাইল ফোন কোম্পানি, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া শিল্প, চিকিৎসাসেবা, কার্গো সেবা, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডস, আন্তর্জাতিক এনজিও, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, বহুজাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানিসহ ২১টি খাতে কাজ করছেন বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

স্মর্তব্য যে, এদের অনেকে বেতনের তথ্য গোপন করছেন। আবার স্থানীয় বাংলাদেশিরা অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে বিদেশিদের থাকার ক্ষেত্রে সহায়তা করছেন। এ পরিস্থিতিও অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। আমরা মনে করি, বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে অবস্থান নিবন্ধন, কাজের অনুমোদন, নিরাপত্তা ছাড়পত্রসহ আইনি প্রক্রিয়ায় কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। এর অবসানই কাম্য। আমরা জানি, সরকার অর্থ পাচার রোধে নানান উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে অবৈধভাবে বিদেশিদের মাধ্যমে টাকা পাচারের এই পথও বন্ধ করতে হবে। টিআইবি যেহেতু অবৈধভাবে থাকা নাগরিক চিহ্নিত করেছে, ফলে বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করুক এটিই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<87478 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1