পাঠক মত

মানুষের মানবিক বিচার বিবেচনাবোধ

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

রোমা আক্তার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
মানুষের মানবিক বিচার বিবেচনাবোধ অপরাধপ্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। দরিদ্র, অসহায় মানুষের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যদিয়ে মানুষের মধ্যে বিবেকবোধ ও মানবিকতার জাগরণ ঘটে। কিন্তু যে সব শিক্ষিত তরুণ সমাজ আগামী সুশীল সমাজের কর্ণধার তাদের দ্বারা যখন মানুষের প্রতি মানবিক অবমাননার সৃষ্টি হয় তা অতি লজ্জাকর বিষয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র এবং আমাদের শিক্ষিত উচ্চবিত্ত সমাজ যখন ৫ টাকার কারণে দরিদ্রতায় জর্জরিত, দুই বেলা খেতে না পাওয়া রিকশাওয়ালাকে চড়, ঘুষি মারে তখন আসলেই সমাজের মানবিক অবমাননা ঘটে। রাস্তার পাশে মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত পুরুষকে ৩০০ টাকা ও একই ভার বহনকারী নারীকে ২০০ টাকা প্রদান করা যেন মানবিক চরম অবমাননাকে প্রস্ফুটিত করে। রাস্তার পাশে অন্ধ ভিক্ষুককে ৫ টাকা না দিয়ে যখন দামি রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভালো ভালো খাবার খেয়ে ৫০০ টাকার সঙ্গে ৫০ টাকা বকশিশ দিয়ে আসি তখন বোঝা যায় আমাদের মধ্যে মানবিকতা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০০ টাকা বেতন দিয়ে ঘরের মেঝে থেকে শুরু করে রান্নাবান্না, জুতো পরিষ্কার, টয়লেট পরিষ্কার করানো বুয়াটার কথা কেউ চিন্তা করে না। তার অসুস্থতা, অসুবিধাকে না মেনে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করলেও ৫০০০০ টাকা বেতনের সরকারি কর্মকর্তা হয়েও বুয়ার অর্ধেক সময়ও কাজ করতে আমরা নারাজ। এই হলো আমাদের দায়িত্বজ্ঞান আর মানবিকতা। এভাবে সামাজিকভাবে আমাদের মানবিকতায় পচন ধরেছে। যার ফলে ২ বছরের শিশুও এ পচনশীল সমাজের বিকৃত মানসিকতার লেলিহান শিখা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ করে লাইভে এসে তারা যেমন নারীর প্রতি মানবিক অবমাননার পরিচয় দিচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে সমাজ ও রাষ্ট্রের অক্ষমতাকে ফুটিয়ে তুলছে। রিকশাওয়ালার ওপর চড়াও হওয়া যেমন আধিপত্য তথা নিম্নশ্রেণির ওপর অত্যাচার ও শোষণকে প্রকাশ করে পক্ষান্তরে এই আচরণের মধ্যদিয়ে শিক্ষিত শ্রেণির বিকৃত মানবিকতার প্রকাশ ঘটে। সমান পরিশ্রমের পরেও ঠিকাদার কর্তৃক নারীদের ১০০ টাকা কম দেওয়াটাও মানবিক অবমাননা ও বিকৃত মনোভাবের প্রতীক। এভাবে কাজের বুয়ার প্রতি নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো মানবিক অবমূল্যায়নজনিত কাজের ধরন সামাজিক বিকৃতি দৃষ্ট হচ্ছে। মানুষ শিক্ষিত ও অঢেল অর্থের মালিক হলেই তাদের মধ্যে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয় না। মানবিকতা, বিবেকবোধ যার মধ্যে জাগ্রত হয়, মানুষের দুঃখ-শোকে যে কাতর হয়, যার মধ্যে সহমর্মিতা বিরাজ করে সে কখনো অমানবিক, ধর্ষক ও হত্যাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে না। সমাজকে পরিশীলিত করে তুলতে, মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ ঘুচাতে এবং বিকৃত মানসিকতা দমনে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি সাধনের মধ্যদিয়ে এর থেকে দেশ, জাতি সর্বোপরি সমাজের উত্তরণ সম্ভব।