বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্য

পরিস্থিতি বুঝেই পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চীনে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে এশীয় অঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, এমন আশঙ্কার কথা বিশ্লেষকরা আগেই বলেছেন। এখন বাংলাদেশও করোনার জ্বর টের পাওয়া শুরু হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে স্ক্রু ড্রাইভার থেকে শুরু করে বড় বড় প্রকল্পের যন্ত্রপাতি চীন থেকে আমদানি হয়। এরই মধ্যে বেইজিং ও ঢাকার আমদানি-রপ্তানিসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন এলসিও (ঋণপত্র) বন্ধ। মাসখানেক এ অচলাবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশকে তার বড় মূল্য দিতে হতে পারে। আর এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, করোনাভাইরাস বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্যের জন্য অশনিসংকেত। অস্বীকারের উপায় নেই যে, বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম সহযোগী চীন। চীন বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়িক অংশীদারও। ফলে করোনাভাইরাস নিয়ে যে সমস্যা চলমান, তাতে উভয় দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে এর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জানা যায়, চীন থেকে শিল্পের কাঁচামাল, বাণিজ্যিক পণ্যসহ কয়েকটি মসলাও আসে। ফেব্রম্নয়ারি ও মার্চ মাসে দেশটি থেকে যে পণ্যগুলো বাংলাদেশমুখী জাহাজে বোঝাই করার কথা, তা কমপক্ষে ১০ দিন পিছিয়েছে। চীনে নববর্ষের ছুটি বাড়লে এ সময় আরও পেছানোর আশঙ্কা রয়েছে। ছুটি বাড়লে পণ্যের পাশাপাশি চীনা কারিগরি কর্মকর্তারাও আসতে পারছেন না। এতে বহু ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এতে উৎপাদন খাতসহ অনেক প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হতে পারে। চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিসিসিআই) তথ্যে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শুধু ফেব্রম্নয়ারি মাসে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার (২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঝুঁকিতে পড়েছে। বিষয়টি উদ্বেগের বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আমদানি ও রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে এ ব্যাপারে নজর রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এফবিসিসিআই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে দ্রম্নততম সময়ে একটি প্রতিবেদনও দেবে। আর এই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই সরকার পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে কোনো সমস্যা নেই। তবে করোনাভাইরাস সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকার এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে উলেস্নখ করে তিনি বলেছেন, এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সব দেশ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছে। উলেস্নখ করা যেতে পারে, করোনার নেতিবাচক প্রভাবে ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে ভোগ্যপণ্যের দাম অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। নিজেদের ব্যবহারের জন্য চীন যেসব পণ্য আমদানি করে, পুরো পৃথিবীতে সেগুলোর দাম কমে যাচ্ছে। চীন যেগুলো রপ্তানি করে, সেগুলোর দাম বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বাজারেও এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে আদা, রসুন ও দারুচিনি এ তিন মসলা চীন থেকে আমদানি করা হয়। এবার পেঁয়াজ যোগ হয়েছে। করোনার কারণে ৪৫ টাকা কেজির রসুন ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারেই। চীন থেকে টেক্সটাইল, যন্ত্রপাতি ও বৈদু্যতিক সরঞ্জামাদি, সার, টায়ার, লৌহ ও ইস্পাত, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, গমসহ বেশকিছু পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। আর রপ্তানি করে- চামড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, চা, তৈরি পোশাক, মৎস্যজাতীয় পণ্য। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন থেকে পণ্য আমদানি আটকে গেলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যেমন বাড়বে, তেমনিভাবে বাণিজ্য ঝুঁকি বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সর্বোপরি বলতে চাই, ইতিমধ্যে চলতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়ার তথ্য সামনে এসেছে, সেহেতু ভবিষ্যতে যেন এই ঝুঁকি আর না বাড়ে, তেমন উদ্যোগই নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখা দরকার, বিশ্ব অর্থনীতি, শেয়ারবাজার ও আমদানি-রপ্তানিতে চীনের করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট নেতিবাচক দৃশ্যমান। অনেক দেশ চীনের সঙ্গে আকাশপথে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ চীনের নাগরিকদের আগমনী ভিসা বন্ধ করেছে। আর অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে এর নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা কঠিন। প্রত্যাশা থাকবে, সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এমন উদ্যোগ নিশ্চিত করুক, যাতে বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কোনো ধরনের সংকটের সম্মুখীন না হয়।