বিদেশে কর্মরত নারীশ্রমিক

সুরক্ষা নিশ্চিত হোক

প্রকাশ | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কিংবা নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা নারীকর্মীর সংখ্যা কমছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বিগত বছরগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান যাচাই করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা মনে করি, যখন নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীর দেশে ফিরে আসার হার কমছে, তখন বিষয়টি ইতিবাচক। কেননা সচ্ছলতার আশায় বিদেশগমন করে নির্যাতিত হয়ে ফিরে এলে তা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। নারীকর্মী ফেরত আসার হার কমবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী। বিশেষ করে গত বছরের নভেম্বরে সৌদি আরব সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকের পর এই হার কমেছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব। যদিও কী পরিমাণ নারীকর্মী দেশে ফিরে এসেছেন, তার সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে নানা কারণে ফিরে আসা নারীকর্মীর সংখ্যা ছিল ৯৭৮ জন। এরপর ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৫৩০ জন নারীকর্মী বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসেন। বাকি ৮ মাসে ফেরত এসেছেন ১৮৭ জন। অর্থাৎ ২০১৯ সালে দেশে ফিরেছেন ৭১৭ নারীকর্মী। তবে ফিরে আসার সংখ্যা কিছুটা বেশি হতে পারে বলে ধারণা প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক কর্মকর্তাদের। এ ছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৫-১৭ সালে শুধু সৌদি আরব থেকে দূতাবাসের সেফহোমের মাধ্যমে দেশে ফিরেছেন চার হাজার ৫৬৫ জন নারী, ২০১৮ সালে ২ হাজার ৭১৩ এবং ২০১৯ সালে ১ হাজার ২২৯ জন নারীকর্মী। এই হিসাবেও ফিরে আসা নারীকর্মীর সংখ্যা কমে আসার ধারণা পাওয়া যায়। আর ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সৌদি থেকে নারীকর্মী দেশে ফিরছেন ১ হাজার ২৫০ জন। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে ফিরেছে প্রায় ১ হাজার ৩৫৩ জন নারীকর্মী। আর এ বছরের শুধু জানুয়ারিতেই এসেছেন ১৭৫ নারীকর্মী। আমরা বলতে চাই, যখন এমন বিষয় সামনে আসছে, আগের মতো গণহারে এখন আর নারীকর্মীরা আসছেন না অর্থাৎ ফিরে আসার হার কমছে তখন এই বিষয়টিকে আমলে নিতে হবে এবং একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার বিদেশে কর্মরত নারীশ্রমিকের সুরক্ষাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উদ্যোগী হওয়া। উলেস্নখ্য, নারীকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে গত বছরের নভেম্বরে সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয় বৈঠকে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। আমরা বলতে চাই, এর আগে নারীকর্মীরা নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসছেন এমন বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে। ফলে সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে বিদেশে কর্মরত নারীশ্রমিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ, ফলে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার বিষয়টি জরুরি। এ ক্ষেত্রে, নারীশ্রমিকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণ না দিয়ে বিদ্যমান প্রশিক্ষণকে আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী করে তুলতে হবে বলেও যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসা নারীকর্মীর সংখ্যা কমছে এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিদেশে কর্মরত নারীশ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।