বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

'এনটিআরসিএ'র 'পকেট কাটা' নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কিছু প্রশ্ন সাধন সরকার

বিভিন্ন সময় 'এনটিআরসিএ' কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন বিবেচনাহীন সিদ্ধান্তে হাজার হাজার শিক্ষক নিবন্ধনধারীর কপাল পুড়েছে! আশা করি, 'এনটিআরসিএ' কর্তৃপক্ষ নিজের স্বার্থ নয়, বেকার চাকরি-প্রত্যাশী লাখ লাখ তরুণের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
নতুনধারা
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

আমি 'এনটিআরসিএ'র (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) একজন শিক্ষক নিবন্ধনধারী এবং চাকরি প্রত্যাশী। 'এনটিআরসিএ'র 'পকেট কাটা' শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে গত প্রায় দুই-তিন বছর ধরে বেকার চাকরি প্রত্যাশী লাখ লাখ তরুণদের মধ্যে অসহায়ত্ব কাজ করছে। বেকারদের জিম্মি করে 'এনটিআরসিএ'র শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই ব্যবসায়িক মনোভাব বাংলাদেশে তো বটেই, পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে কিনা সন্দেহ! নিবন্ধনধারী তরুণদের কত শত প্রতিবাদ, আবেদন-নিবেদন সত্ত্বেও 'এনটিআরসিএ' এ ব্যাপারে নির্বিকার! এ ছাড়া 'এনটিআরসিএ'র আরও কিছু পরিকল্পনাহীন পদক্ষেপের ফলে নিবন্ধনধারীদের মনে ব্যাপক হতাশার তৈরি হয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হলো :

যত খুশি তত আবেদন নয়, নিবন্ধিত শিক্ষকদের একটি আবেদনে নিয়োগ হোক :

\হদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে (স্কুল, স্কুল-২, কলেজ পর্যায়) শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে 'এনটিআরসিএ' (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) খুব শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তি (১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদেরসহ) জারি করতে যাচ্ছে। ধারণা করা যায়, গণবিজ্ঞপ্তি জারির সঙ্গে সঙ্গেই পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে দেশের সব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। যার অর্থ হলো- আবার যত খুশি তত আবেদন! কেননা, ২০১৮ সালের নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিয়োগের (১-১৪তম নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের জন্য) উদ্দেশ্যে যে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল সেখানে যত খুশি তত আবেদনের কথা বলা হয়েছিল। ২০১৬ সালের গণবিজ্ঞপ্তিতেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। সহজ করে বললে, এর মাধ্যমে বেকার চাকরি প্রত্যাশীদের 'পকেট কাটা' হয়েছিল! বলা হয়েছিল, সব নিবন্ধনধারী পদের ধরন ঠিক রেখে শূন্য পদ সাপেক্ষে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে। যার ফলে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার টাকা খরচ করেও আবেদন প্রক্রিয়ার মারপঁ্যাচে অনেক মেধাবী নিবন্ধনধারীরও চাকরি হয়নি। যাদের মেধা তালিকা একটু পেছনের দিকে ছিল চাকরির আশায় তাদের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য আরও বেশি অর্থ (লাখ টাকারও বেশি!) খরচ করতে হয়েছে। একজন পরীক্ষার্থীকে শুরুতে টাকা দিয়ে আবেদন করে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নিয়োগের সময় চাকরি পেতে আবার কেন হাজার হাজার টাকা খরচ করে আবেদন করতে হবে? তাও আবার একটি আবেদন না, যত খুশি তত আবেদন।

এমন ভাগ্য যাচাইয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ম্যারপঁ্যাচে মেধাতালিকার অনেকে নিচে অবস্থান করে চাকরি পেয়ে যাচ্ছে, আবার মেধা তালিকার উপরের দিকে অবস্থান করেও অনেকের চাকরি হচ্ছে না। প্রশ্ন হলো, তাহলে মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে নাকি টাকারও মূল্যায়ন হচ্ছে। বাংলাদেশের অন্যান্য চাকরিতে একটি আবেদনের মাধ্যমে চাকরি হলে শিক্ষক নিবন্ধনে হবে না কেন? নাকি বেকার চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা নিতেই হবে! আরও সহজে ব্যাখ্যা করে যদি বলি, একটি প্রতিষ্ঠানে একটি পদে ২৫ জন চাকরি প্রত্যাশী নির্দিষ্ট অর্থ খরচ করে আবেদন করলেও (কেননা, কেউ জানে না কে কোন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করবে অথবা কার চাকরি হবে!) চাকরি হবে একজনের, বাকি ২৪ জনের আবেদনের কষ্টের টাকা (প্রতিটি আবেদন ১৮০+ টাকা করে) নষ্ট হবে! পরিশেষে একটি প্রতিষ্ঠানে তো নিয়োগ হবে তাহলে কেন একটি আবেদনের টাকা রাখা হবে না? আর এভাবে যদি নিয়োগ প্রক্রিয়া (একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন অর্থ হলো যত খুশি তত আবেদন) রাখতেই হয় তাহলে আবেদন যতই হোক না কেন একটি আবেদনের টাকা রাখলেই তো হয়। 'এনটিআরসিএ'র কর্তৃপক্ষের প্রতি আকুল আবেদন প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আবেদনে এভাবে অসহায় বেকারদের পকেট কাটবেন না, মেধাবী নিবন্ধিতদের লটারির মতো করে ভাগ্য নির্ধারণ করবেন না! বিষয়ভিত্তিক একটি আবেদনের ভিত্তিতে মেধা তালিকা অনুসারে নিবন্ধনধারীদের অতি দ্রম্নত নিয়োগের ব্যবস্থা করা হোক।

বয়স ৩৫ পার হওয়া নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের সমাধান কোন পথে :

আরও একটি জটিল সমস্যা হলো- ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালার নতুন শর্ত বিবেচনায় 'এনটিআরসিএ'র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও গণবিজ্ঞপ্তির আবেদনে ৩৫ পস্নাস বয়সধারীদের (৩৫+ বয়সী লক্ষাধিক নিবন্ধনধারী) অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে লক্ষাধিক প্রার্থী এবারও আসন্ন গণবিজ্ঞপ্তির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারবে না। কেননা, ২০১৮ সালের 'এনটিআরসিএ'র শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় বয়স ৩৫ পার হওয়া নিবন্ধনধারীদের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে এই নীতিমালা প্রকাশের আগের নিবন্ধনধারীদের বয়স ৩৫ পার হওয়ার ফলে দোষটা কী? যখন (২০১৮ সালের নীতিমালার আগে) চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল তখন তো নির্দিষ্ট বয়সের কথা বলা হয়নি। এখন আবেদন করার সময় বয়স ৩৫ পার হওয়ার কারণে বাদ পড়া অনেকের শিক্ষাজীবনে চারটিতে প্রথম শ্রেণি আছে। আবার স্কুল-কলেজের নিবন্ধনে বাদ পড়া অনেকের মেধা তালিকা প্রথম সারির দিকে (২য়, তয়, ৬ষ্ঠ,- - -)। তাদেরকে যদি সদ্য নীতিমালার বেড়াজালে আটকিয়ে বাদ দেওয়া হয় তাহলে এ দুঃখ তারা কোথায় রাখবে? ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালায় বয়স ৩৫ পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে কিন্তু এর আগে যাদের নিবন্ধন সনদ আছে তাদের তো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুযোগ দেওয়া উচিত। কেননা, এ ব্যাপারে নিবন্ধনধারীদের যুক্তিই সঠিক। কারণ চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিদেখে সবাই আবেদন করে। কবে, কখন, কোথায় নিয়োগ হবে এটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে।

নারী কোটা ও নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান উলেস্নখ:

গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত আবেদনের সময় যে পদে আবেদন করা হয় সে পদটি নারী কোটা না পুরুষ কোটা আবার এমপিও না নন-এমপিও; অনেক সময় এটা বোঝা যায় না। দেখা গেছে, আবেদন করার পর অনেক পুরুষ প্রার্থী চাকরিতে (শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে) যোগ দিতে গিয়ে দেখে পদটি নারী কোটার। আবার অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে দেখে পদটি নন-এমপিও। এমনটি হওয়ার ফলে অনেক প্রার্থী ব্যাপক হয়রানি ও সমস্যার শিকার হয়েছে। অনেকের চাকরি হয়েও চলে গেছে! অনেকে আবার নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে বছরের পর ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছেন। 'এনটিআরসিএ'র কাছে আকুল আবেদন, যখন চূড়ান্ত আবেদনে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান দেখে যখন একজন প্রার্থী আবেদন করবে সেখানে প্রতিষ্ঠানের পাশে কিংবা অন্য কোনো ভাবে যেন স্পষ্টভাবে লেখা থাকে পদটি নারী বা পুরুষ কোটা। আবার একইভাবে যেন লেখা থাকে পদটি এমপিও বা নন-এমপিও। তাহলে নিবন্ধনধারীরা যেমন দেখেশুনে আবেদন করতে পারবে তেমনি হয়রানি ও সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও এড়াতে পারবে।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়ভিত্তিক শূন্যপদের তালিকা আগেই দিয়ে দেওয়া হয়। তাহলে জেনে-বুঝে আবেদন করতে নিবন্ধন প্রত্যাশীদের সুবিধা হবে। যাহোক, 'এনটিআরসিএ' কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই (গত ২৩ জানুয়ারি) ১৭ তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সময়ও খুবঅল্প দিয়েছে (আবেদনের শেষ তারিখ ৬ ফেব্রম্নয়ারি)। দরকার ছিল আসন্ন গণবিজ্ঞপ্তি ও ১৬তম নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া! 'এনটিআরসিএ' কর্তৃপক্ষ নিজের বেলায় নিয়ম-কানুনের কথা বলে, কিন্তু নিবন্ধনধারীদের যৌক্তিক দাবি ও বিভিন্ন সমস্যার কথা বিভিন্ন সময় বিবেচনায় নেওয়া হয় না। যাহোক, 'এনটিআরসিএ' কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর লাখ লাখ নিবন্ধন সনদধারীর মনে আশার সঞ্চার হয়েছে।

বিভিন্ন সময় 'এনটিআরসিএ' কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন বিবেচনাহীন সিদ্ধান্তে হাজার হাজার শিক্ষক নিবন্ধনধারীর কপাল পুড়েছে! আশা করি, 'এনটিআরসিএ' কর্তৃপক্ষ নিজের স্বার্থ নয়, বেকার চাকরি-প্রত্যাশী লাখ লাখ তরুণের কথা বিবেচনায় নিয়ে এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।

সাধন সরকার: কলাম লেখক ও পরিবেশকর্মী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<87628 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1