থামছেই না ইয়াবা পাচার

অভিযান আরও কঠোর হোক

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সর্বনাশা মাদকের বিরুদ্ধে সরকার বেশ আগেই 'জিরো টলারেন্স'নীতি গ্রহণ করেছে। সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে দেশব্যাপী ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে দেশবাসীর প্রশংসাও পেয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে এ অভিযান এখনো অব্যাহত রেখেছে প্রশাসন। বাস্তবতা হলো, প্রশাসনের এই অভিযানের পরও ভয়ংকর নেশাদ্রব্য ইয়াবা পাচার বন্ধ করা যায়নি। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে চালান। পাচারকারীরা নিত্যনতুন কৌশলে ইয়াবা পাচার করেই চলেছেন। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের বলেই প্রতীয়মান হয়। জানা যায়, সম্প্রতি কক্সবাজার জেলায় মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফে ২১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ঘটা করে আত্মসমর্পণ করানো হয়েছে। এক বছর আগে এই টেকনাফেই ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছিলেন। মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ বা প্রশাসনের অভিযানের পরও ইয়াবা পাচারের বিষয়টি সামনে আসায় অভিযানের ভূমিকা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে প্রায় প্রতিদিনই সর্বনাশা ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র। গত বছর টেকনাফ সীমান্তসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই কোটির বেশি ইয়াবা জব্দের রেকর্ড রয়েছে। এর আগের বছর ইয়াবা উদ্ধার হয়েছিল ৫ কোটি ৩০ লাখ। মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য মতে, মাদক নির্মূল অভিযান চলাকালে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমপক্ষে ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৮ সালের মে মাসে এই অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী সন্দেহে পাঁচ হাজারের বেশি আটক রয়েছে। মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল মনে করেন, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী বা রাঘব-বোয়ালরা আত্মসমর্পণ করছে না বা তাদের ধরা হচ্ছে না, সে কারণে ইয়াবা ব্যবসা থামছে না। মাদকের আসল ব্যবসায়ীদের কতটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে, সে প্রশ্ন থাকছেই। বিশ্লেষকরা মনে করেন, মাদক ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়ার জন্য আরও গভীরে যাওয়া প্রয়োজন। তবে সার্বিকভাবে যে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে তা অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশে ইয়াবার প্রচলন যিনি ঘটিয়েছেন, তিনি এখন আর দৃশ্যপটে নেই। এভাবে অনেক গডফাদারই আত্মগোপনে কিংবা জেলে আছেন বলেও তথ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন তথ্য এবং গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, প্রভাবশালী কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না এই অভিযানে। সুতরাং এরপরও কেন ইয়াবা পাচার থামছে না তার কারণ শনাক্ত করাও জরুরি। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু এরপরও যদি মাদক নির্মূল করা না যায়, ইয়াবা পাচারের নতুন কৌশলের বিষয়টি সামনে আসে তখন তা অত্যন্ত হতাশার জন্ম দেয় বৈকি। এমনও অভিযোগ আছে, বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মীও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার অভিযোগ আছে। আমরা আশা করব, এমন অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া অপরিহার্য। মাদকবিরোধী অভিযানে প্রকৃত অপরাধীদের কেউই ছাড় পাবে না এটাই প্রত্যাশা। সর্বোপরি বলতে চাই, মাদক ব্যবসা একটি গুরুতর অপরাধ। অনেক দেশে এজন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও রয়েছে। আমাদের দেশেও যুবসমাজকে বাঁচাতে মাদক ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দেশে ভয়াবহ মাত্রায় মাদকের বিস্তারের বিষয়টি সবাই কমবেশি অবগত। নেশার উদ্রেককারী মাদকের মধ্যে তরুণরা ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিলেই আসক্ত হয় বেশি। কিন্তু বর্তমানে দেশের প্রধান নেশার দ্রব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ইয়াবা। মূলত মিয়ানমার থেকে নাফ নদী দিয়ে ইয়াবার চালান আসে ব্যাপক পরিমাণে। অন্যান্য সীমান্তপথ, এমনকি আকাশপথেও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য আসার খবর রয়েছে। মাদকের কারণে সামাজিক শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়ে। বস্তুত সব অপরাধের মূলে রয়েছে মাদক। সঙ্গত কারণেই প্রত্যাশা থাকবে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে এবং তরুণসমাজকে বাঁচাতে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোরতা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যে কোনো মূল্যে মাদক নির্মূল হোক এটাই দেশবাসী প্রত্যাশা করে।