নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় যেমন অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন, তেমনি অনেককে বরণ করতে হচ্ছে পঙ্গুত্বের অভিশাপ। একই সঙ্গে এটাও বলা দরকার, সড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাই শুধু নয়- এর পাশাপাশি ঘটে চলেছে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা হলেও গণপরিবহণে নারীর নিপীড়িত-নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি খুব কমই গুরুত্ব পাচ্ছে বলে অভিযোগ নারী অধিকার সংগঠকদের। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে, নারী নেত্রীরা বলছেন, সড়কে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা কমাতে নানা পর্যায় থেকে বিভিন্ন দাবি-পরামর্শ উপস্থাপিত হলেও আড়ালেই থেকে যাচ্ছে গণপরিবহণে চলাফেরায় নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি। আমরা মনে করি, গণপরিবহণের নারীর নিরাপত্তার বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া দরকার, নারীর নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে- নারীবান্ধব যানবাহন না থাকার বিষয়টি। আলোচনায় এসেছে, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নারীবান্ধব যানবাহন, চালক ও সহকারী থাকতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে যাত্রীদের মানসিকতায়ও। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যখন নানা দিক থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের অগ্রগতিতে নারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাখছে, শিক্ষা বাড়ছে, নিজ যোগ্যতায় দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করছে নারী- তখন গণপরিবহণে নারীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে বিষয়টি অত্যন্ত পরিতাপের। লক্ষণীয় যে, সংশ্লিষ্টদের মতে, সড়কে নারীর নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষিত ড্রাইভারের অভাব একটি বড় সমস্যা এমনটিও আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া নারীবান্ধব পরিবহণব্যবস্থা গড়তে ও পেশাগত নারী গাড়িচালক তৈরির কার্যক্রম নেই বললেই চলে, এমন বিষয়ও সামনে এসেছে। ফলে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি নারী গাড়িচালক প্রশিক্ষিত করার ক্ষেত্রেও নজর দিতে হবে বলে যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা আমলে নেওয়া সমীচীন। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্র্যাকের 'নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের গণপরিবহণে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী ইভ টিজিং, শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের দ্বারাই যৌন হয়রানির শিকার হন বেশির ভাগ নারী, যার হার ৬৬ শতাংশ। নারীদের যৌন হয়রানির মূল কারণ হচ্ছে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলোর অভাব ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রতিবেদনে এমনটিও উঠে এসেছে, শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির ০ ক্ষেত্রে ৮১ শতাংশ নারী বলেছেন, তারা চুপ থাকেন এবং ৭৯ শতাংশ বলেছেন আক্রান্ত হওয়ার স্থান থেকে সরে যান। আমরা মনে করি, এমন চিত্র পরিলক্ষিত হলে তা অত্যন্ত ভীতিপ্রদ এবং উৎকণ্ঠার। উলেস্নখ্য, এই পরিস্থিতিতে ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি প্রোগ্রামের জেন্ডার স্পেশালিস্ট হোসনে আরা বেগম বলেছেন, সমান অধিকারের কথা বললেও সমঅধিকার নীতি এখনো আমরা করতে পারিনি। শুধু গণপরিবহণ নয়, নারীর চলাচলের সবদিকই আমাদের ভাবতে হবে। আমরা মনে করি, বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়। সর্বোপরি বলতে চাই, সড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ছাড়াও যখন যৌন হয়রানি, ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটছে এবং নারীর নিরাপত্তাসংক্রান্ত উদ্বেগজনক চিত্র সামনে আসছে তখন তা এড়ানো যাবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে গণপরিবহণসহ সার্বিকভাবে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি কাম্য।