পাঠক মত

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আত্মহত্যা নয়, আত্মরক্ষা করতে হবে বর্তমানে বিশ্বের মারাত্মক সমস্যাগুলোর মধ্যে আত্মহত্যা বড় সমস্যা। আত্মহত্যার মাত্রা দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে তরুণ-তরুণী এবং ৩৫ বছরের নিচে যাদের বয়স তারাই বেশি আত্মহত্যা করে মরছে। আত্মহত্যা কি? আত্মহত্যা হলো নিজের জীবনকে নিজেই বিনাশ করা। আমাদের দেশে আত্মহত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়েছে গেছে। পত্রিকা, টেলিভিশনে চোখ পড়লেই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায় আত্মহত্যা করে মানুষ মরছে। বাংলাদেশে আত্মহত্যার সঠিক কোনো ডাটা না থাকলেও একটি বিষয় পরিষ্কার, সেটা হলো তরুণ- তরুণীরা আত্মহত্যার পথে বেশি ঝুঁকে পড়ে। এ ছাড়া অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষও আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। যা সত্যিই অত্যন্ত দুঃখজনক। আত্মহত্যার আগে একজন ব্যক্তি তার জীবনকে মূল্যহীন মনে করে। এই চিন্তা থেকেই আত্মহত্যার পথে চূড়ান্ত গমন করে। আমাদের দেশের মানুষ বিভিন্নভাবে আত্মহত্যা করে। গলায় ফাঁস দেয়া, বিষ পান করা, গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে, নিজেকে গুলি করে, উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে, অতিমাত্রায় ওষুধ সেবন করে প্রভৃতি। এরমধ্যে গ্রামের লোকেরা গলায় ফাঁস দিয়ে ও কীটনাশক দ্রব্যের মাধ্যমে আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে শহরের লোকেরা গলায় ফাঁস দিয়ে, অতিমাত্রায় ওষুধ সেবন করে, নিজেকে নিজেই গুলি করে, গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আত্মহত্যা করে থাকে। এসব আত্মহত্যার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে হতাশা, দারিদ্র্য, পরিবার থেকে বিচ্ছেদ, বিবাহ বিচ্ছেদ, প্রেমে ব্যর্থতা, বেকারত্বের অভিশাপ, পরীক্ষায় ফেল করা, জীবনে আশানুরূপ উন্নতি করতে না পারা, মাদকাসক্ত প্রভৃতি উলেস্নখযোগ্য। হতাশা হলো একটি বড় ধরনের মানসিক সমস্যা। একজন ব্যক্তি যখন হতাশায় ভোগে তখন সবকিছুই তার কাছে বিষাদময় লাগে। এ কারণে অনেক সময় মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। আর এই সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তির জন্য ব্যক্তি আত্মহত্যা করে। আবার বিবাহ বিচ্ছেদ বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য কিছু ঘটলে তাদের ভিতরে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। একাকিত্বের নিঃসঙ্গতা তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয় নিজেকে। অনেকে মনে করে এই নিঃসঙ্গতা দূর করতে আত্মহত্যাই হলো প্রধান ফরমুলা। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অনেকে আত্মহত্যাকে বরণ করে নিচ্ছে। মূলত, তরুণ-তরুণীরা প্রেমে ব্যর্থ হলেই আত্মহত্যা করে। এরা মনে করে আত্মহত্যার মাধ্যমেই সব যন্ত্রণা ভুলে থাকা সম্ভব। কিন্তু আসলেই কি সম্ভব? কখনো সম্ভব নয়। কারণ একটি জীবনের মূল্য কেউ দিতে পারবে না আবেগপ্রবণ হয়ে এই পথ বেছে নেয়া ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে যে সব সমস্যারই সমাধান আছে। আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারত্বের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। দীর্ঘদিন বেকারত্বের কারাগারে বন্দি থাকায় তাদের মনে চরম হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই হতাশাকে চিরতরে বিদায় দেয়ার জন্য অনেকে আত্মহত্যার পথকে শান্তি-দাতার পথ মনে করে। পরীক্ষায় ফেল করা বা ভালো রেজাল্ট করতে না পারার ফলে অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। পরিবার থেকে তো বাড়তি চাপ থেকেই যায় যা আত্মহত্যার পথকে আরও সহজ করে দেয়। জীবনে আশানুরূপ উন্নতি করতে না পেরে মানুষের এ ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া মোটেও উচিত নয়। এখন প্রশ্ন হলো আত্মহত্যা কি সব সমস্যার সমাধান হতে পারে? কখনোই সমস্যার সমাধান হতে পারে না। কেননা নিজের জীবনকে বিনাশ করে সমস্যার সমাধান হয় না। অন্যদেরও ভালো রাখা যায় না। 'আমি আত্মহত্যা করব, আমি বাঁচতে চাই না, এই জীবন ব্যর্থ, আমিই সব সমস্যার জন্য দায়ী।' এরূপ চিন্তা যখন একজন ব্যক্তি করে তখনই তার আত্মহত্যার পথে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমি মনে করি আত্মহত্যার হাত থেকে রেহাই পেতে হলে নিজ ধর্মীয় বই-পুস্তক বেশি করে পড়তে হবে। কেননা ধর্মের মূল বাণী হলো মানুষের কল্যাণ ও শান্তির জন্য। ধর্মীয় বই-পুস্তক পড়লে মনের ভিতর শান্তি অনুভব হয় এবং সব ধরনের মানসিক সমস্যা দূর করা যায়। সুতরাং আমি বলব যখন কেউ আত্মহত্যার চিন্তা করবে তখন একবার হলেও ধর্মাচরণে মনোযোগ দেয়া উচিত। তাহলে ব্যক্তি আত্মহত্যার চিন্তা থেকে বেরিয়ে আত্মরক্ষার পথ খুঁজে পাবে। সুতরাং আত্মহত্যা নয়, আত্মহত্যা রক্ষা করতে হবে। 'আর নয় আত্মহত্যা, করব জয় ব্যর্থতা' এ স্স্নোগান হৃদয়ে ধারণ করেই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। জুয়েল নাইচ শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ