নির্বাচন বনাম গণতন্ত্রকামীদের আহাজারি লোকমান ফরাজী

নতুন রাজনীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে জনগণকে ঘুমন্ত থাকলে হবে না, জেগে উঠতে হবে। শুধু রাজনৈতিক এনার্কি দেশ জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর; কিন্তু জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে হবে। যে রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক মুক্তির জন্য রাজনীতি করবে। খাদ্য, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রীয় সব কাঠামোকে উন্নত করতে হবে।

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ফেব্রম্নয়ারি ০১, ২০২০ ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়ে গেল। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হওয়াই গণতন্ত্রের প্রধান লক্ষণ। মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি স্থানে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় সাংবাদিকও আহত হয়েছেন; এমনকি একজন পুলিং এজেন্ট নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্যে গত কয়েকদিন দৈনিক পত্রিকাগুলোর উপসম্পাদকীয়তে নির্বাচন নিয়ে নানা সমালোচনা, পরামর্শ, আদেশ, উপদেশ ও হাহাকার ফুটে উঠছে। এসব কলামিস্টদের ভাবখানা এমন যে তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও গণতন্ত্র সম্পর্কে অনেক বেশি জ্ঞান রাখেন। বর্তমানে পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ আছে যেখানে গণতন্ত্র আছে- সেই দেশটি কোন দেশ? নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি দিয়ে এ জাতীয় কলামিস্টরা গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করছেন। কোনো সরকার গণতান্ত্রিক, নাকি অগণতান্ত্রিক- তা কি ভোটারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুপাতের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা যাবে? বলা হচ্ছে, জনগণ ভোটবিমুখ- এ জন্য সরকার দায়ী। সরকার কি জনগণকে পুলিশ দিয়ে ধরে এনে ভোটকেন্দ্রে হাজির করবে? এটা তো জিয়াউর রহমান, এরশাদ গংরা 'হঁ্যা-না' ভোটের মাধ্যমে 'সামরিক-গণতন্ত্র!' প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে করেছিলেন। ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতেই হবে; কেন? ভোট দেওয়ার অধিকার থাকলে, ভোট না দেওয়ার অধিকার থাকবে না? বেশিরভাগ কলামিস্টরা আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্যে করে লিখছেন, জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আনার দায়িত্ব সরকারের!! পাগলামির তো সীমা আছে! সব দায়িত্ব এখন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপিয়ে এ ধরনের কলাম লেখকরা কী বোঝাতে চাচ্ছেন? তা অবশ্যই ভাবনার বিষয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অসংখ্য-অগণিত সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে শিক্ষার প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি আর অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাটাই এখন পর্যন্ত সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। গত ১০ বছরে বহুবার প্রাথমিক শিক্ষাকে নানা পরীক্ষণের মধ্য দিয়ে পার করছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তো শিক্ষাকে সমূলে ধ্বংস করে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে পালিয়েছেন। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাকে সেই ধ্বংসের হাত থেকে কতটা উদ্ধার করতে পারেন, সেটাই এখন ওনার জন্য পরীক্ষা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, চিকিৎসা খাতে অনিয়ম, ব্যাংক লুট, নারী-পুরুষ ও শিশুনির্যাতন, হত্যা, গুম, বিচার বিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ, ধর্মীয় উস্কানি, জঙ্গিবাদসহ নানা সমস্যা ও সংকটে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার চ্যালেঞ্জের মুখে। এরই মধ্যে যুবলীগের অনিয়মের বিরুদ্ধে দলের শক্ত অবস্থান এবং ছাত্রলীগ নিয়ে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগ নিয়মিত নির্বাচন দিচ্ছে। জনগণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে বিরোধী দলগুলোর দায়িত্ব কি। কোনো দায়িত্ব নেই? তাহলে একটিমাত্র দল আওয়ামী লীগের ওপর সব রকমের দোষ চাপানোর অর্থ কী। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে সাধারণ নির্বাচনেও কোনো শক্তিশালী বিরোধী দল বাংলাদেশে ছিল না। এর পরবর্তী সরকারগুলো ক্ষমতায় গিয়েই বিরোধী দল নিধনের প্রক্রিয়া শুরু করে, এভাবে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক চর্চাকে ব্যাহত করা হয়েছে যে কোনো সরকারের আমলেই। তাই সব দোষ আওয়ামী লীগের ওপর চাপানো এক ধরনের একপেশে সমালোচনা। বর্তমান বাংলাদেশে প্রয়োজন সম্পূর্ণ নতুন একটি রাজনৈতিক দল। যে দল জনগণের ভেতর থেকে গড়ে উঠবে, জনগণের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবে। কোনো বৈদেশিক দূতাবাসে ঘুরাঘুরি না করে, জাতিসংঘের কাছে ধরনা না দিয়ে, বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে এগিয়ে যাবে উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে; এমন একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই নতুন রাজনৈতিক দল গতানুগতির বাইরে বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যা চিহ্নিত করে, বৈশ্বিক অবস্থা ও রাজনীতি বিবেচনা করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে উঠবে। জনগণ এই নতুন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবে। যারা নতুন রাজনীতি চান না, বাংলাদেশে শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে তুলতে চান না, তারাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করে এই অব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে চান। তাই তারা অরাজনৈতিক, সামাজিক আন্দোলন, নারীবাদী আন্দোলন, পুরুষবাদী আন্দোলন, নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার ইত্যাদির কথা বলেন। এসবই বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য উন্নত রাজনীতির পরিপন্থি। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র, বিএনপির গঠনতন্ত্র, জাতীয় পার্টিসহ আরও অনেক রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র আছে। অন্যদিকে বিভিন্ন অরাজনৈতিক, সামাজিক, সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনেরও গঠনতন্ত্র বা দফাভিত্তিক কর্মসূচি আছে। বদরুদ্দীন উমরের আঠার দফা, সিরাজুল আলম খানের চৌদ্দ দফা, স্বদেশচিন্তা সঙ্ঘের আটাশ দফা, সুজন-এর চৌদ্দ দফাসহ অনেক সংগঠনের আছে নানামুখী রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক তৎপরতা। বাংলাদেশের সচেতন জনগণের উচিত এসব রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি সম্পর্কে জানা। সে অনুযায়ী নতুনভাবে চিন্তা করে একটি নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য পরিবেশ তৈরি করা। যে রাজনৈতিক দল বুর্জোয়া, অগণতান্ত্রিক, সমাজতন্ত্রহীন, ধর্মহীন না হয়ে বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক মুক্তির দল হয়ে উঠবে। বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে উন্নতরূপ দানের জন্য প্রয়োজন একটি উন্নত রাজনৈতিক দল। যত কঠিন হোক, যত দুর্গম হোক, যত পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকারই হোক- এর কোনো বিকল্প নেই। সে জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। গতানুগতিক গণবিচ্ছিন্ন রাজনীতির বাইরে জনগণকে সম্পৃক্ত করে রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে হবে। যে রাজনৈতিক দলের শাখা-প্রশাখা গ্রাম থেকে শুরু করে মহলস্না, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা, জেলা, বিভাগভিত্তিক কমিটি গঠন করে জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। নতুন রাজনীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে জনগণকে ঘুমন্ত থাকলে হবে না, জেগে উঠতে হবে। শুধু রাজনৈতিক এনার্কি দেশ জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর; কিন্তু জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে হবে। যে রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক মুক্তির জন্য রাজনীতি করবে। খাদ্য, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রীয় সব কাঠামোকে উন্নত করতে হবে। লোকমান ফরাজী: কলাম লেখক