ওমানে বিপাকে বাংলাদেশিরা নতুন শ্রমবাজারের সন্ধান করতে হবে

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ওমানে সেলস (বিক্রয়) প্রতিনিধি ও পারচেজ (ক্রয়) প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা প্রবাসীদের বিদ্যমান ভিসার মেয়াদ বাড়ানো বন্ধ হওয়ার ঘোষণার ফলে বিপাকে পড়েছেন দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশটির জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির সূত্রে এমনই খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। এতে ওই সব পদে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের চলমান ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্বদেশে ফিরে আসতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনা আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য উদ্বেগের। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ওমানীকরণের অংশ হিসেবে দেশটির এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কর্মরত প্রবাসীরা দেশটির এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ওমান প্রবাসীদের জন্য ৩৭টি বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কোম্পানির মালিক আর প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ভিসার মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। নতুন করে এসব কাজের জন্য আর কোনো ভিসাও ইসু্য করা হবে না। দেশটির নাগরিকদের আরও বেশি চাকরির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেই মূলত এসব পেশায় প্রবাসীকর্মী নিয়োগে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে এসব পেশায় কর্মরত বিদেশি কর্মীদের জায়গায় ওমানিদের প্রতিস্থাপন করা হবে। বলাই বাহুল্য, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজারের সুদিন আর নেই। বরং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেরাই এখন সমূহ সংকটে। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশিদের জন্য সর্ববৃহৎ ও আকর্ষণীয় শ্রমবাজারগুলো বর্তমানে নানা বিপদের সম্মুখীন। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যুদ্ধসহ নানান কারণে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দেশগুলোর নানান টানাপড়েনের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত বিদেশি শ্রমিকনির্ভরতা স্বভাবতই তাদের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। ফলে শ্রমনির্ভরতা কমাতে তারা এখন ব্যতিব্যস্ত হয়ে বিদেশি শ্রমিক কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। সৌদি আরব কিছুদিন আগে প্রবাসী কর্মীদের ১২ ধরনের কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ছোটখাটো ব্যবসা-বাণিজ্য। দোকানপাট ইত্যাদি। এসব কাজের সুযোগ তারা করে দিতে চাইছে স্বদেশের নাগরিকদের বেকারত্ব ঘোচাতে। এবার একই ধারায় ওমানকে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। আর দেশগুলোর এই সিদ্ধান্তের কারণে শুধু বাংলাদেশই নয়- ভারত, পাকিস্তান, মিসরের নাগরিকদেরও একই অবস্থা হবে। স্মর্তব্য যে, বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে সারা বিশ্বে প্রবাসী আয় বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ, যার পরিমাণ ৪৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর এই আয় বৃদ্ধির ফলে দরিদ্র, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো উপকৃত এবং উন্নত হচ্ছে। রেমিট্যান্সপ্রবাহের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বেশ উজ্জ্বল। তবে এ কথাও অস্বীকারের উপায় নেই যে, বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেরই অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। চীনের করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এখন ওমানের নতুন আইনের কারণে বাংলাদেশের শ্রমিকরা ফিরে এলে স্বভাবতই রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে আসবে। এ ছাড়া এই জনশক্তি বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা মনে করি এই সংকট মোকাবিলা করতে সরকার তথা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন নতুন শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার দিকে কূটনীতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেহেতু শ্রমিকনির্ভরতা কমাতে দক্ষ এবং রোবট ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে, সেহেতু এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তি সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখা জরুরি, বাংলাদেশ জনবহুল দেশ। এ ছাড়া বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের কষ্টার্জিত অর্থে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ পূরণ হয়, অর্থনীতি গতিশীল হয়। ফলে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা যাতে কোনো ধরনের বিপাকে না পড়েন সেজন্য সংশ্লিষ্টদের যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।