আর কত দিন রক্ত ঝরবে?

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মিসফার বিন হাসান ছাদাবা কোরাইশী শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় হাজারি গলি শাখা, চট্টগ্রাম
বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশটির নিত্যদিনের এক অন্যতম সমস্যা সড়ক দুর্ঘটনা। ছোট-বড় নানা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নিহতের দুঃসংবাদ আমাদের রীতিমতো ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলছে। একই সঙ্গে করেছে শোকাহত। সুব্যবস্থিত সড়ক, সুশৃঙ্খল গতির গাড়ি, সঠিক আইন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে সড়ক দুর্ঘটনার আতঙ্ক প্রতিটি মুহূর্তে জনসাধারণের মধ্যে বিরাজ করছে। ভয়াবহ একটি স্পর্শকাতর সড়ক দুর্ঘটনার পরপরই শুরু হয়ে যায় ন্যায্য বিচারের দাবি ও আন্দোলন। ইতিহাসের পাতায় সাক্ষী হয়ে থাকা এমনই এক আন্দোলনের নাম 'নিরাপদ সড়ক চাই (২০১৮)'। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যবিহীন এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ও সুশৃঙ্খলতার নমুনা পুরো জাতির সামনে তুলে ধরে। 'নিরাপদ সড়ক চাই' আন্দোলনের পাশাপাশি তারা দেখিয়ে দেয় উন্নত বিশ্বের মতো সড়কে পরিবহন শৃঙ্খল, সড়ক আইন ও নিয়মের যথাযথ প্রয়োগ। আমরা সাধারণ যাত্রীরা যে পরিবহণেই যাতায়াত করি, আমরা যদি পরিবহণচালকদের সড়ক আইনে সতর্কতা অবলম্বন, দ্রম্নতগতির লাইন, ধীরগতির লাইন মেনে চলা, যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে ওঠা-নামা, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়িতে পরিবহণ করা বর্জনের মাধ্যমে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের যদি বাধ্য করতে পারি তাহলে সড়কে ও পরিবহণচালকদের মধ্যে সুশৃঙ্খলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এত কিছুর পরও কতটা নিরাপদ সড়কে চলাচল করছি আমি, আপনি? প্রশ্ন থেকে যায়। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর এ সড়ক পরিবহণ আইন পাস হয় এবং ১ নভেম্বর থেকে এই আইন কার্যকর হয়। নতুন সড়ক পরিবহণ আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর শাস্তির বিধান রয়েছে। 'দন্ডবিধির ৩০৪' ধারায় যাই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংগঠিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। একই সঙ্গে তা জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এ ছাড়া নতুন আইনে বেপরোয়া যানবাহন চালনার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটালে শাস্তির বিধান তিন বছর। নতুন আইনে চালক ও পথচারী উভয়ের জন্য কঠোর বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এত আইন এরপরও চালকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব। সড়ক আইন মেনে চলার অবহেলা। এখনো চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। এভাবে আর কতদিন, কত রক্ত ঝরবে? কত মা সন্তান হারা হবে? মা-বাবার কাছে সন্তানের লাশ দাফন করা যে কতটা কষ্টের তা ভাষায় লিখে প্রকাশের মতো নয়। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় সড়ক আইন মেনে চলা, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং যুগোপযোগী আইনের প্রণয়ন। চালক, যাত্রী, পথচারী, টাফিক আইন বিভাগ ও সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনতিবিলম্বে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন সম্ভব।