উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে

ভারতকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ছাড়িয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আপামর জনসাধারণের কঠিন পরিশ্রমের ফসল হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো পদ্মা সেতু। রাজধানীতে মেট্রোরেলের কাজ দ্রম্নতগতিতে এগিয়ে চলেছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস, আয়ু বৃদ্ধিসহ উন্নয়নের নানান বিষয়ই দৃশ্যমান। বিশ্বের অনেক দেশ এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে অনুসরণ করছে। সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক প্রতিবেদনও বলা হয়েছে, অন্তর্ভুতিমূলক নানা উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ অনেকটাই পেছনে ফেলেছে প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশকেই। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয়। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। বলার অপেক্ষা রাখে না, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে এক সময় ক্ষুধা-দারিদ্র্যের ভূমি, তলাবিহীন ঝুড়িসহ নানা অবমাননাকর তকমা দেওয়া হয়েছিল। বাস্তবতা হলো, এসব অবমাননা ঝেড়ে ফেলে বাংলাদেশ এখন একটি স্থিতিশীল সমৃদ্ধ অর্থনীতি অর্জনের পথে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের। এই দীর্ঘ সময়ে এতটা পথ এগিয়ে এসে বাংলাদেশের মানুষ এখন স্বপ্ন দেখছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক নানা টানাপড়েনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্থিতি ধরে রাখতে প্রতিবেশী দেশ ভারতকে যখন রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে, সেখানে চলতি অর্থবছরে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিই সবচেয়ে বেশি হবে বলে ইতোমধ্যে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘ। বিশ্ব এ সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি ২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭.৮ শতাংশ। ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক কারান থাপড় 'ভারতকে যেভাবে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ' শীর্ষক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনেও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রগমনের তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত ওই বিশ্লেষণে লেখক উলেস্নখ করেছেন, ভারত এখনো ১৯৭০ দশকের মতো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে (৫ শতাংশের নিচে) আছে, আর বাংলাদেশ ৮ শতাংশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে আক্রমণাত্মক কথা বলারও সমালোচনা করেছেন ওই প্রবন্ধে। তিনি উলেস্নখ করেন, ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিষান রেড্ডি বলেছেন, ভারত যদি নাগরিকত্বের প্রস্তাব দেয় তাহলে অর্ধেক বাংলাদেশ খালি হয়ে যাবে। কিন্তু কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও আক্রমণাত্মক মন্তব্যের কথা বাদ দিলেও বাংলাদেশের সত্যিকার অবস্থা সম্পর্কে তিনি একেবারেই যে অজ্ঞ তা এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরও উলেস্নখ করেন, তিনি জানেন না ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে ভালো করছে, বিশেষ করে জীবনযাপনের মানে। ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি চীনা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ১৫ শতাংশ করপোরেট করের প্রস্তাব দিয়ে মরিয়া চেষ্টা করছেন। অথচ বাংলাদেশ সেই দুটি দেশের একটি, যেখানে আগেই চীনা বিনিয়োগ যাচ্ছে। লন্ডন ও নিউ ইয়র্কে রাস্তার পাশের দোকানগুলো ভরে গেছে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকে। এতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২০১৯ অর্থবছরে দ্বিগুণ হয়েছে এবং ভারতের উলেস্নখযোগ্যভাবে কমেছে। বলাই বাহুল্য, শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের জীবনযাপন অনেক বেশি আকর্ষণীয়। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীদের সম্ভাব্য গড় আয়ু যথাক্রমে ৭১ ও ৭৪ বছর। ভারতে তা ৬৭ ও ৭০ বছর। এ ছাড়া ভারতে নবজাতক মৃতু্যর হার, শিশু মৃতু্যর হার, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর মৃতু্যহার রোধেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। এ ছাড়া সাক্ষরতা, শিক্ষার হারও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশের সার্বিক বিষয়ে ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিকের এই বিশ্লেষণ আমাদের জন্য গৌরবের। তবে এতে আত্মতৃপ্তিতে না ভুগে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা জানি, সরকার অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্যদিয়ে দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তথা উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার পথে এগিয়ে চলেছে। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনের উদ্যোগও নিতে হবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মধ্যদিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।