পাঠক মত

শিক্ষিত বেকারত্ব সমাধানে চাই নতুন কর্মক্ষেত্র

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মাহমুদুর রহমান মানিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্বজুড়ে বেকারত্ব যে হারে বাড়ছে তার প্রভাব পড়ছে আমাদের দেশেও। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেখানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমে আসছে আমাদের দেশে হচ্ছে তার উলটোটা, ক্রমেই দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে চলছে। সারা বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ২৫ কোটি কর্মক্ষম মানুষ দিনে এক ঘণ্টার জন্যও কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছে না এবং তাদের অধিকাংশের নেই শিক্ষার মানদন্ডের কোনো সার্টিফিকেট। কিন্তু আমাদের দেশের বেকারদের বেশির ভাগের রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। জিডিপির অগ্রগতিতে শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয় পুরো পৃথিবীতে বাংলাদেশ ঈর্শনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। কাজেই শিক্ষিত বেকারের হার বাড়াটা মোটেও কোনো কাজের কথা নয়। বর্তমানে আমাদের দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা এবং যাদের প্রকৃত অর্থেই কাজ দরকার তাদের প্রায় সাড়ে চার শতাংশ বা প্রায় ২০ লাখ মানুষ বেকার। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো এই বেকারদের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের রয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট। সংখ্যার হিসেবে প্রায় ১০ লাখ। এরচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো সরকারি-বেসরকারি প্রায় ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ নতুন সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত কর্মক্ষম কর্মসংস্থানের বাজারে কর্মের জন্য হাজির হচ্ছে। কিন্তু এত এত শিক্ষিত মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় ফলে তাদের চাপ দিন দিন বেড়েই চলছে। অথচ এই তরুণ শক্তির জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হলে তারা হয়ে উঠবে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি তাদের কর্মের মাধ্যমে দেশ আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। আমাদের দেশে শিক্ষিত তরুণ যেখানে ভালো চাকরি পাচ্ছে না সেখানে দেশের জব মার্কেটে বাড়ছে বিদেশিদের আধিক্য যা আমাদের তরুণ প্রজন্ম বা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো কোনো খবর নয়। বেকারত্ব যে কোনো দেশের জন্য অভিশাপস্বরূপ, শিক্ষিতদের একটি বড় অংশ কর্মহীন থাকলে দেশ এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে শুধু পিছিয়েই পড়বে। অর্থনীতির চাকা হঠাৎ করে উল্টো ঘোরা শুরু করবে, দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়বে, জাতির অগ্রগতির পথ কালো মেঘে ঢেকে যাবে। তাই শিক্ষিত বেকারের প্রতি নজর দেয়া এখন সময়ের দাবি, নতুন নতুন সেক্টরের মাধ্যমে তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়ে তাদের পরিচর্যা না করলে শিক্ষিত তরুণরা বিপথগামী হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে উপযুক্ত কর্মসংস্থান পেলে তারাই হয়ে উঠবে দেশের মূল শক্তি। তাই সরকারকে কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে, এবং এ দেশের তরুণদের সুযোগ দিতে হবে এই শর্তে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিবেশ দিতে হবে প্রয়োজনে অতিরিক্ত কিছু সুযোগ-সুবিধাও দেয়া যেতে পারে। উপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে বর্তমানের শিক্ষিত বেকারত্বের বোঝা অচিরেই হয়ে উঠবে দেশের সম্পদ, দরকার সুদৃষ্টি ও সদিচ্ছা।