সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

সময়োপযোগী ও দিকনির্দেশনামূলক

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উলেস্নখ করেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সিঙ্গাপুরের চেয়েও শক্তিশালী। ব্যাংকে টাকার কোনো সমস্যা নেই। টাকা আছে বলেই সেবা খাত, সামাজিক নিরাপত্তা, অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ চলছে। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চীন থেকে যেসব কাঁচামাল আসত, এখন তার বিকল্প বাজার খোঁজা হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক শাসনামলে বাংলাদেশ অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাসহ নানান খাতে অগ্রগতির চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গণ্য করছে। সংগত কারণে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রধানমন্ত্রী উলেস্নখ করেছেন, সিঙ্গাপুর ছোট দেশ, জনসংখ্যাও খুব কম। সেখানে শৃঙ্খলা আছে। সিঙ্গাপুরে বিরোধী দল বা অন্য কোনো কিছু নেই। একটা পত্রিকা, সরকার দ্বারা চলে। সেখানকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ যে রকম, তাতে উন্নয়ন করাটা অনেক সহজ। আর বাংলাদেশ আয়তনে ছোট কিন্তু জনসংখ্যা অনেক বেশি। এখানে প্রতিনিয়ত অগ্নিসন্ত্রাস, খুনখারাবি, অত্যাচার- এগুলো মোকাবিলা করতে হয়। এখানে উন্নয়ন করা কঠিন কাজ। তিনি আরও বলেছেন, দেশে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিষয়ে ভারত বা পাকিস্তানের চিন্তাবিদ, অর্থনীতিবিদরা যা বলছেন, সেটা শুনলে বোঝা যাবে বাংলাদেশ কোথায় আছে। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, বাংলাদেশ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। সম্প্রতি ভারতের একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক ভারতকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেছেন। তথ্য অনুযায়ী, দেশের রিজার্ভ এখন ৩২ বিলিয়নের ওপরে। এ পরিমাণ রিজার্ভে ছয় মাসের খাদ্য আনা যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্পর্কে তার সরকারের নানান কর্মকান্ডের চিত্রও তুলে ধরেছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের 'করোনাভাইরাস' নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। বিদেশ থেকে কেউ এলে পরীক্ষা করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। অপরদিকে এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন থেকে শিল্পসহ অন্যান্য কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হচ্ছে স্বীকার করে তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে সরকার যথেষ্ট সচেতন। যত দামই হোক, বিকল্প পথ নেওয়া হচ্ছে। ওষুধশিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিস যে দেশেই পাওয়া যায়, সেগুলো আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আসন্ন রমজান উপলক্ষে যাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম না বাড়াতে পারেন সে জন্য তেল, ছোলাসহ প্রয়োজনীয় পণ্য সরকার মজুদ করছে বলেও উলেস্নখ করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি জনগণকে যে কোনো ধরনের গুজবে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়াও তিনি ডেঙ্গু নিয়ে দেশবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজেদের বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিজের ঘরে বা আশপাশে মশা জন্মাচ্ছে কি না, তা নিজেদের দেখতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে তৎপর, তারপরও সবাইকে সচেতন হতে হবে। দেশবাসীর সহযোগিতায় দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার আহ্বানও তিনি জানান। আমরা মনে করি, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সাম্প্রতিক সময়ের নানান সংকট ও সম্ভাবনা, নারী নির্যাতন রোধ, সন্ত্রাস-দুর্নীতি ইত্যাদি সামগ্রিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে যে বক্তব্য রেখেছেন তা সময়োপযোগী এবং দিকনির্দেশনামূলক। বলাই বাহুল্য, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবল এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যে দেশ এগিয়ে চলেছে, বিষয়টি লুকানো নয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের প্রিয় দেশ উন্নত দেশের কাতারে এগিয়ে যাক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।