যৌন হয়রানি

নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি এর পাশাপাশি ঘটে চলেছে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনাও। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের তথ্য মতে, পরিবহণে চলাচল করার সময় ৯৪ শতাংশ নারী মৌখিক, দৈহিক বা অন্য যে কোনো ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হন। আর পোশাক কারখানায় যৌন হয়রানির শিকার হন ৮০ শতাংশ নারী। এ ছাড়া নিজ কর্মস্থলে ১০ শতাংশ নারী পুলিশ সদস্য বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য যে, গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'কর্মক্ষেত্রে সব ধরনের সহিংসতা ও যৌন হয়রানি বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা-২০০৯ বাস্তবায়ন ও আইএলও কনভেনশন ১৯০-এর ভূমিকা' শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। আমরা বলতে চাই, এভাবে যদি নারীরা ক্রমাগত সহিংসতা এবং যৌন হয়রানির শিকার হন তবে সৃষ্ট পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। আমরা উলেস্নখ করতে চাই, কিছুদিন আগেই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছিল, সড়কে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা কমাতে নানা পর্যায় থেকে বিভিন্ন দাবি-পরামর্শ উপস্থাপিত হলেও আড়ালেই থেকে যাচ্ছে গণপরিবহণে চলাফেরায় নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি। যেখানে নারীর নিরাপত্তার উদ্বেগের কারণ হিসেবে উঠে আসে- নারীবান্ধব যানবাহন না থাকার বিষয়টি। এ ছাড়া চলাচলে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নারীবান্ধব যানবাহন, চালক ও সহকারী থাকার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। আমরা বলতে চাই, চলাচলে কিংবা কর্মস্থলে যেভাবে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে তথ্য আসছে তা অত্যন্ত ভীতিপ্রদ এবং পরিতাপের। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যখন বিভিন্ন দিক থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের অগ্রগতিতে নারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, শিক্ষা বিস্তৃত হচ্ছে, নিজ যোগ্যতায় দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করছে নারী- তখন নারীরা সহিংসতা বা যৌন হয়রানির শিকার হবেন, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এটা কাম্য হতে পারে না। আমলে নেওয়া দরকার, সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সায়েমা খাতুন বলেছেন, 'বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময়ে বস, সহকর্মী অথবা অন্য কারো দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু চাকরি হারানোর ভয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারছেন না।' আবার 'পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া আউটলেটগুলোতে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি করা হয়নি। এতে করে নারীর জন্য নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক কর্মস্থল সৃষ্টিতে ব্যবস্থাপনার উচ্চ পর্যায়ে কর্তাব্যক্তিদের নিঃস্পৃহতা ও অবহেলা স্পষ্ট হয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত আমরা এটাও উলেস্নখ করতে চাই, ব্র্যাকের 'নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের গণপরিবহণে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী ইভটিজিং, শারীরিক বা অন্য কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সি পুরুষদের দ্বারাই যৌন হয়রানির শিকার হন বেশিরভাগ নারী, যার হার ৬৬ শতাংশ। আর নারীদের যৌন হয়রানির মূল কারণ হচ্ছে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলোর অভাব ইত্যাদি বিষয়ও সামনে আসে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যখন যৌন হয়রানি, ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটছে এবং নারীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগজনক চিত্র সামনে আসছে তখন তা এড়ানো যাবে না। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে নারীর যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি থাকুক এমনটি কাম্য।