পাঠক মত

মৃতু্যর কঠিনতম পথ আত্মহত্যা

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আমাদের পৃথিবীটা যেমন সুন্দর, তেমনি তার সবকিছুই সুন্দর। এই পৃথিবীর সুন্দর সব কিছুকে ফেলে স্বেচ্ছায় জীবন বিনাশের নাম আত্মহত্যা। আত্মহত্যা সারাবিশ্বে একটি ভয়াবহ সমস্যা; বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আত্মহত্যা ও আত্মহননের প্রচেষ্টা মানবসভ্যতার শুরু থেকে প্রচলিত। তবে বর্তমানে সারাবিশ্বে আত্মহত্যার হার বেড়েছে। যুগে যুগে দেশে দেশে আত্মহত্যাকে কখনো উৎসাহিত, কখনো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমানেও এ বিষয়ে বিভিন্ন মহলে ভিন্ন ভিন্ন বিতর্ক রয়েছে। উন্নত বিশ্বে স্বেচ্ছা মৃতু্যর দাবি নিয়ে আন্দোলন আছে। যাই বলি না কেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আত্মহত্যা একটি অপ্রতিরোধযোগ্য ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। স্বাভাবিক চিত্তেই প্রশ্ন হতে পারে, মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? আমি মনে করি, আত্মহত্যার নানা কারণ আছে। তবে তার মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো, মানুষের যখন জ্ঞান-বুদ্ধি-উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজেকে অসহায়-ভরসাহীন মনে হয়, জীবন যুদ্ধে ব্যর্থতা (পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ও চাকরি না পাওয়া), পারিবারিক মনোমালিন্য, মেয়েদের যৌতুকের কারণে ঝগড়া, প্রেম-বিরহ ও মিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়া, দীর্ঘস্থায়ী রোগ-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া, শক্রর কাছে ধরা না দেয়া ইত্যাদি নানা কারণে মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা শুধু বড়রা করে তা নয়, শিশু-কিশোররাও করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১১ বছরের ওপরের বালক-বালিকাদের আত্মহত্যা প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক বাড়ছে। বিষণ্নতা থেকেই মূলত এ আত্মহত্যাগুলো হচ্ছে। আত্মহত্যায় বাংলাদেশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এটি দেশে এখন একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কেননা, দেশে হঠাৎ করেই আত্মহত্যার হার বেড়ে গেছে। শুধু অশিক্ষিতদের মধ্যে নয় এখন শিক্ষিত সমাজেও আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক। এ দেশে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধিতে আমরা ধারণা করছি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিবর্তিত ধারা, স্বাস্থ্য ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার দ্রম্নত পরিবর্তন, দৈনন্দিন জীবনের নানা ধরনের জটিলতা যেমন-পারিবারিক ও নিজস্ব সংকটাপন্ন অবস্থা এবং প্রচলিত বিশ্বাস, সামাজিক আচার-আচরণ, কৃষ্টি প্রভৃতি সামলে চলতে গিয়ে অনেকের মধ্যেই বিভিন্ন স্ববিরোধিতা দেখা দিচ্ছে। অনেকেই এ পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া বা প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলার পরিবর্তে এসব অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। আজকাল পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে যেমন দাম্পত্য কলহ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যৌতুক, পরকীয়া প্রেম ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রেমে ব্যর্থতা, পরীক্ষায় পাস না করা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অযাচিত গর্ভধারণ, মেলামেশা কম করার প্রবণতা এবং আত্মহত্যার উপকরণের (কীটনাশক, ঘুমের ট্যাবলেট) সহজপ্রাপ্যতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। বিগত কয়েক বছরে অল্পবয়সী তরুণী ও স্কুলগামী মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ফলে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব আত্মহত্যাকারীর মধ্যে এক বিরাট অংশ মৃতু্যকালীন কোনো না কোনো মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয় বলে গবেষকদের অভিমত। আত্মহত্যা যেসব কারণেই হোক না কেন আত্মহত্যার মাধ্যমগুলোর প্রতি আমাদের চোখ রাখতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশে বিষপানে আত্মহত্যা করে বেশি লোক, তাই এসব উপকরণ দুষ্প্রাপ্য করতে হবে। বিনা প্রেসক্রিপশনে ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। কারণ ভুলভাল ওষুধ খেয়েও আত্মহত্যা করা সম্ভব। এসব বিষয়ে পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন ও নাটক সিনেমার মাধ্যমে আত্মহত্যার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। আত্মহত্যার ইচ্ছাপোষণকারী ব্যক্তিকে ঘৃণা বা অবজ্ঞা না করে তাকে ভালোবাসতে পারলে সে মনে করবে পৃথিবী আর যন্ত্রণার স্থান নয়, এটা আনন্দের স্থান অতএব, বেঁচে থাকাটা খুবই দরকার। ফলে আত্মহত্যা হতে মুখ ফিরিয়ে একটি আদর্শ জীবন গড়বে বলে আমি মনে করি। মোহাম্মদ অংকন ঢাকা