পাঠক মত

ব্যাপক হারে পলিথিনের ব্যবহার

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দৈনন্দিন জীবনে আমরা ব্যাপকহারে পলিথিনের ব্যবহার করছি। একথা সত্য যে, স্বল্প খরচ ও ব্যবহারের সুবিধা পলিথিনের জনপ্রিয়তা করেছে আকাশচুম্বী; সেই সঙ্গে কিছুটা হলেও আমাদের জীবনকে করেছে সহজ। কিন্তু এই পলিথিনের ক্ষতির দিকটি বিবেচনা না করেই আমরা প্রতিনিয়ত নানান কাজে তার ব্যবহার করছি যথেচ্ছা এবং ব্যবহারের পর নিয়ম না মেনেই ফেলছি যত্রতত্র। যার দরুন ভয়ংকর সব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আমাদের চারপাশের পরিবেশ। ক্রমাগত বেড়ে চলা নানামুখী দূষণের মাত্রাতিরিক্ততার ফলে বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ দূষণের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। নাম লিখিয়েছে পলিথিন ও পস্নাস্টিক বর্জ্যের কারণে বিপদে থাকা শীর্ষ দশ দেশের তালিকায়ও। পরিবেশ দূষণে মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে পলিথিনের ভূমিকা এখন এদেশে ভয়াবহ পর্যায়ে অবস্থান করছে। নীরব ঘাতক এই পলিথিন শুধু মাটি নয়, আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। বিপন্ন করে তুলেছে জীববৈচিত্র্যকে। ইতোমধ্যে অকেজো করে দিয়েছে বড় বড় শহরের ড্রেনেজব্যবস্থাকেও। নদী-নালা, খাল-বিল, নর্দমা, পুকুর, খেলার মাঠ, বসতবাড়ির আনাচ-কানাচ থেকে শুরু করে প্রতিটি জায়গা আজ আমাদের ব্যবহৃত পলিথিনের দখলে। এসবের গন্ডি ছাড়িয়ে পলিথিন এখন সমুদ্রকেও দূষিত করছে। অনেক সামুদ্রিক প্রাণী পলিথিনকে খাবার মনে করে খেতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য। মানুষের খাদ্যশ্রঙ্খলেও ঢুকে পড়েছে পলিথিন তথা পস্নাস্টিকজাতীয় দ্রব্য। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, প্রতি সপ্তাহে একজন মানুষকে খেতে হচ্ছে পাঁচ গ্রাম পস্নাস্টিক! পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, আমরা দেশের সিংহভাগ নাগরিক পলিথিন ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জানি। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশই প্রথম পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল। তাই বলে কিন্তু এদেশে পলিথিনের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং ব্যবহারে মোটেও ভাটা পড়েনি। শহরের অভিজাত বিপণি থেকে শুরু করে অজপাড়াগাঁয়ের কাঁচাবাজার পর্যন্ত ক্রয়কৃত অধিকাংশ পণ্য দেয়া হচ্ছে পলিব্যাগে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সচেতনতার বুলি আওড়াতে আওড়াতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ২০০২ সালে সংশোধিত পরিবেশ আইনে রপ্তানিমুখী শিল্প বাদে সব ধরনের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এই আইন অমান্য করলে দশ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও দশ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়। পাশাপাশি পলিথিন ব্যাগ বাজারজাত করলে ছয় মাসের কারাদন্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানার আইনও করা হয়। ২০১০ সালে পলিথিনের পরিবর্তে প্রতিটি মোড়কে পাটজাত ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে আইন পাস করা হয়। মূল কথা হচ্ছে- আইন আছে কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। বিগত দশকের গ্রাম-বাংলায় প্রচলিত কিছু ঐতিহ্যের পুনঃপ্রবর্তন এখন সময়ের দাবি। যে সময়টাতে বাজার করার জন্য প্রতিটি মানুষ আলাদা একটি ব্যাগ নিয়ে তবেই যেত বাজার করতে। ডাল, চিনি, লবণ, আটা, মসলা প্রভৃতি দ্রব্য কাগজের ঠোঙায় করে বিক্রি করা হতো। মাছ-মাংস বিক্রি হতো কলা বা কচুর পাতায় করে। নানা আচার-অনুষ্ঠানে খাবারের পেস্নট হিসেবে ব্যবহার করা হতো কলাপাতা এবং পদ্মপাতা। সেই সময়টাতে কলাপাতা ছিল মজলিশ খাবারের প্রধান আকর্ষণ! সভ্যতার চরম উৎকর্ষতার এই যুগে কথাগুলো শুনে আপনাদের খুব হাসি পাচ্ছে নিশ্চয়? কিন্তু সত্যি হলো, পলিথিনের ভয়াবহ দূষণের এই যুগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুইটি দেশ পলিথিনের বিকল্প হিসেবে আবার কলাপাতার ব্যবহার শুরু করেছে। থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের অভিজাত সব সুপারশপগুলোতে পস্নাস্টিকের ব্যাগ এবং পলিথিনের পরিবর্তে কলাপাতায় মুড়িয়ে সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। তারা নানান খাবারের প্যাকেট তৈরিতে ব্যবহার শুরু করেছে কলাপাতার। কলাপাতার এমন বিকল্প ব্যবহার পরিবেশ রক্ষার এক সৃজনশীল উদ্যোগ বলে বিবেচিত হতে পারে। আমাদের একটা অভ্যাস আর একটু সচেতনতাই পারে পলিথিনের ব্যবহারকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করতে। এস এ এইচ ওয়ালিউলস্নাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া