শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা-অর্থনীতি : ঝুঁকিই বেশি, আছে সম্ভাবনাও

করোনাভাইরাস আতঙ্কের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। পর্যটন খাত থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন খাত, অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি বা গাড়িশিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ও সরবরাহ-ব্যবস্থা দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের প্রবৃদ্ধি কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কবীর মোলস্না
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাঁপছে চীন। প্রায় দেড় সহস্রাধিক প্রাণহানির পর দেশটি এখন বেশ বেকায়দায় আছে। সাধারণ নিরীহ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করছে দেশটি। চীন থেকে করোনাভাইরাস দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এর প্রভাব এখন পড়ছে গোটা বিশ্বে। এর ফলে সংকট বাড়ছে বিশ্ববাণিজ্যে। কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য-বিরোধ বিশ্ব বাণিজ্যকে একদফা ভুগিয়েছে। এর ফলে বৃহত্তর বিশ্ব বাণিজ্যের অংশীদার দুই পক্ষই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের অন্য দেশগুলোও আর্থিক ক্ষতির বা লাভের মুখোমুখি হয়েছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে আরেকটি অর্থনৈতিক ঝুঁকি আসছে সামনের দিনগুলোতে। ঝুঁকি মানেই লাভ বা ক্ষতি। যেখানে একপক্ষের ক্ষতি হয়, সেখানে অন্যপক্ষের লাভ হয়। অর্থনীতির নিয়ম হলো, সুযোগটি সর্বাত্মকভাবে গ্রহণ করা। এর বাইরে নেই বাংলাদেশও।

এর কারণ হচ্ছে, এ দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য অনেকাংশই চীনের সঙ্গে জড়িত বা নির্ভরশীল। ঢাকার আমদানি বাণিজ্যের একটি বড় অংশ (প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ) হয় ওই দেশটি থেকে। চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের সংখ্যা কমপক্ষে এক হাজারের ধরনের। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি হয় অসংখ্য পণ্য। করোনার কারণে আমদানি-রপ্তানিতে চরম প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। চামড়া ও পাটজাত পণ্যসহ অনেক কিছুই এখন রপ্তানি প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল ইতোমধ্যেই দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছে, আদা-রসুনসহ অন্যান্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়নার বিকল্প বাজারে নজর রাখা হচ্ছে।

দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে প্রধান খাত তৈরি পোশাক। এই খাতেও ধাক্কা লাগতে শুরু করেছে করোনার। অন্যদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ যে ১০ মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে, চীনের অনেক নাগরিক সেগুলোতে কাজ করছেন। একই সঙ্গে তাদের প্রকৌশলগত ও টেকনিক্যাল অনেক সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। করোনার প্রভাবে সেগুলোর কাজ শ্লথগতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে এর বহুমুখী প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতিতে ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। করোনা সংকট যত দীর্ঘায়িত হবে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই অর্থনীতিতে এর প্রভাব মোকাবিলায় সরকারকে প্রয়োজনীয় পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে বলে মনে করেন তারা।

এদিকে, দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিষয়টি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনিটরিং করছেন। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন এবং একটি ন্যাশনাল কমিটি গঠন করে দিয়েছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীনা নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হলে দেশটি থেকে মালামাল আমদানি-রপ্তানিতেও অনেক দেশ আগ্রহ হারাবে। বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিকল্প বাজারে নজর রেখেছে সরকার।

বর্তমানে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়, এতে চায়না থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেলেও সমস্যা হবে না। তবে আদা-রসুনসহ অন্যান্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়নার বিকল্প বাজারে নজর রাখছে সরকার।

বাংলাদেশে রেডিমেড গার্মেন্টসের ফেব্রিক্সের একটা বড় অংশ আসে চীন থেকে। চীন থেকে পণ্য আনতে সমস্যা হলে বিকল্প তো ভাবনা রয়েছে সরকারের বিবেচনায়।

পণ্য উৎপাদনে চীন থেকে প্রচুর কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এসব পণ্যের একটি অংশ দেশে বিক্রি হয়, আরেকটি অংশ রপ্তানি হয়। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল যেমন : সুতা ও কাপড়ের উলেস্নখযোগ্য অংশ আমদানি হয় চীন থেকে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে সময়মতো কাঁচামাল আনতে পারছেন না অনেকেই। এর ফলে রপ্তানি পণ্য তৈরিতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।

চীন থেকে তৈরি পোশাকশিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল, শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি, পদ্মা সেতুসহ সরকারি প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, মসলাজাতীয় পণ্য আদা-রসুন, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস পণ্যসহ আরও অনেক পণ্য আমদানি করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের কাঁচামাল ফেব্রিকস, রাসায়নিক পদার্থ, কারখানার যন্ত্রপাতির প্রধান উৎসও চীন। এসব বিবেচনায় নিলে আমাদের দেশের আমদানির বড় বাজার হচ্ছে চীন। ফলে গার্মেন্ট কারখানার পণ্য উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪২ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করে। এরমধ্যে চীন থেকেই আমদানি হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকার পণ্য। হিসাব করে দেখা গেছে, মোট আমদানির প্রায় ২৬ শতাংশই চীন থেকে হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে আমদানি কমেছে ৩ শতাংশ এবং রপ্তানি কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। চীনের এ সংকটের কারণে আমদানি-রপ্তানি আরও কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে রাজস্ব আয়ে। চীনের বিভিন্ন রাজ্যের কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিও ব্যাহত হচ্ছে। চামড়া ও পাটপণ্য রপ্তানি হচ্ছে না। বন্ধ হয়ে গেছে কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি। তৈরি পোশাকেরও একই অবস্থা। উদ্যোক্তারা বলছেন, চীনের এ পরিস্থিতিতে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রভাব ইতোমধ্যে তা শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে চীনে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, কাঁকড়া, কুঁচে রপ্তানি হয়। গত বছর ১৬ কোটি ডলারের চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের সুতার দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা চীন। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে চীন বাংলাদেশ থেকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ডলারের পাটের সুতা আমদানি করেছে। এ সময় ১ কোটি ১৬ লাখ ডলারের কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছে দেশটিতে।

চীনের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর দেশের ব্যাংক খাতও নির্ভরশীল। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ইতোমধ্যে পণ্য আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা অনেক কমে গেছে। এতে ব্যাংকের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ব্যাংকাররা বলছেন, চীনের সঙ্গে অনেক আমদানি-রপ্তানি হয়। মূলধনি যন্ত্রপাতির বেশির ভাগই আসে চীন থেকে।

করোনাভাইরাস ছড়ানো প্রতিরোধে চীন নৌযান চলাচল কমিয়ে দেওয়ায় বাজারে তাদের পরিসেবার চাহিদা কমে গেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে বলে শিপিং কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শিপিং অ্যাসোসিয়েশন বিআইএমকোর প্রধান বিশ্লেষক পিটার স্যান্ড বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যের সংযোগস্থল চীনের বন্দরগুলোর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হওয়ায় শিপিং ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ আন্তঃএশীয় ও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় চীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে অনেক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং কনটেইনারবোঝাই পণ্য পরিবহণের চাহিদা সংকুচিত হয়ে পড়বে।

করোনাভাইরাসের কারণে একদিকে যেমন আমাদের পোশাক খাতে কিছু রিস্ক তৈরি হয়েছে; অন্যদিকে চীন যেসব দেশে রপ্তানি করত তারা যদি সেখান থেকে রপ্তানি কমায়; তাহলে সেই বাজারগুলো বাংলাদেশ ধরতে পারে কিনা, সেখানে আবার একটা সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে যে, নতুন যেসব অর্ডারগুলো আসবে, এগুলো মাধ্যমিক যে পণ্য সেগুলো আমরা কোথা থেকে আনব। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন থেকেই কাঁচামাল আমদানি ও প্রস্তুত পণ্য রপ্তানির বিকল্প বাজার তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

করোনাভাইরাস আতঙ্কের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। পর্যটন খাত থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন খাত, অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রি বা গাড়িশিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ও সরবরাহ-ব্যবস্থা দারুণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের প্রবৃদ্ধি কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্বখ্যাত বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস চীনের তিয়ানজিনে অবস্থিত তাদের কারখানার উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেছে। এতে বিশ্বে জেটবিমান সরবরাহে প্রভাব পড়বে। জাপানি টয়োটা ও হোন্ডা, মার্কিন জেনারেল মোটরস ও জার্মানির ফক্স ওয়াগন ও বিএমডবিস্নউর মতো বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতারাও চীনে তাদের কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ এখনো শুরু হয়নি। চীন থেকে যন্ত্রাংশ সরবরাহ না আসায় দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হুন্দাইও তাদের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।

জাপানের অর্থমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরার মতে, করোনাভাইরাসের কারণে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ও মুনাফা কমবে। যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম ওষুধ কোম্পানি জিএসকে জানিয়েছে, চীনের তিয়ানজিনে তাদের যে কারখানা আছে, সেটি চীনা নববর্ষের লুনার ইয়ারের ছুটির পর থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে। চীনে জিএসকেতে তিন হাজার চীনা নাগরিক কাজ করেন। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পর্যটন খাত। চীনে ঢোকা বা চীন থেকে বের হওয়া এখন কার্যত বন্ধ রয়েছে। যাত্রী কমার কারণে কয়েকটি বিমান সংস্থা চীনে ফ্লাইট বা উড্ডয়ন কার্যক্রম বন্ধ করেছে, কমিয়েছে এবং নিজেদের কর্মীদের ছুটিতে পাঠিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনাদের জাপান, যুক্তরাজ্যসহ বিদেশ ভ্রমণ বাড়লেও এবার তাতে বিপর্যয় নেমেছে।

কবীর মোলস্না: মন্ট্রিয়েল, কানাডা প্রবাসী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89454 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1